"ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন" শিরোনামে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এর উদ্যোগে দু‘দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার আগামী বছরের বিজয় দিবসের আগেই নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয় । এজন্য প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা এবং পরিধি বৃদ্ধিরও পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া বিগত ফ্যাসীবাদী শাসনামলে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন করারও দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহনকারী সকলেই একমত পোষণ করেন যে, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ও তার পরিবার, অবৈধ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, তাদের স্বজন ও ফ্যাসিবাদের রক্ষক আমলা, সাংবাদিক, বিচারক এবং কথিত বুদ্ধিজীবীদের দুর্নীতি ও লুটপাটের যথাযথ তদন্ত এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এমনকি বিচার দ্রুত নিস্পত্তির লক্ষ্যে ঢাকায় এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক দূর্নীতিদমন বিশেষ আদালত স্থাপন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ টিম নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান তারা । জাতীয় সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা প্রয়োজনীয়তার নিরীখে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এতে যৌক্তিক সংস্কারকে কোনমতেই পাশ না কাটানো এবং একইসাথে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেয়ার বিষয়েও জোরালো আলোচনা হয়েছে। এতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, জুলাই গণঅভূত্থানে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো সংকীর্ণ স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখবে এবং সংস্কারসহ নির্বাচনের যাত্রাপথের সকল কর্মকান্ড নূন্যতম ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সম্পন্ন করবে। এসব পক্ষসমূহের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে একটি লিয়াঁজো কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সংলাপে অংশগ্রহণকারী— রা সরকারী প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে এখনও বহাল থাকা ফ্যাসিস্ট শাসকের সমর্থকদের অবিলম্বে সরিয়ে দেয়া এবং বিগত ১৬ বছরে যারা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি ও বন্চনার শিকার হয়েছেন তাদের প্রয়োজনীয় পদন্নোতিসহ পুনর্বহাল এবং যথাযথ জায়গায় নিয়োগ ও পদায়নের দাবি জানানো হয়েছে । জাতীয় সংলাপে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে গণঅভূত্থানে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে এবং শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এই সংলাপে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে য, গণহত্যার দায়ে সংগঠন নিষিদ্ধের যে ক্ষমতা আদালতের রয়েছে তা প্রশাসনিক কর্তৃত্বের মধ্যে নেয়া সঠিক এবং যথাযথ হবে না । সা¤প্রতিককালে জনপ্রশাসন সংস্কার সকমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের হুমকি ও বিশৃঙ্খল আচরণ সরকারি চাকরিবিধির শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে অভিমত ব্যক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংলাপ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকারও উঠে এসেছে সংলাপে। দু'দিনের এই সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সব রকম নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন যে, একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, কল্যাণমুলক এবং ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিকদলগুলো দায়িত্বশীল ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে । ভঅভ্যূত্থান—পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বোধগম্য পরিবর্তন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক নতুন রাজনীতির সূচনা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি বলে একমত পোষণ করা হয় এতে। বাংলাদেশের সার্বিক সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের নিরাপদ ও শান্তিময় জীবনের জন্য সভ্য দরদী রাজনীতির আকুতি জানিয়ে এই সংলাপ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন" শিরোনামে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এর উদ্যোগে দু‘দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জুলাই অভ্যূত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও শক্তি, বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন ও গ্রুপ এবং নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং আহতরা সংলাপ উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংলাপ দুই দিনে মোট ৬টি অধিবেশনে সম্পন্ন হয়। এর বিভিন্ন অধিবেশনে সরকারের ৭জন উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করেন।
প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান