১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে : আইজিপি বাহারুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ যেন আর রাজনৈতিক কুপ্রভাবে না পড়ে এবং পুলিশ রিফর্মের বিষয়ে কাজ চলছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইজিপি এ কথাগুলো জানান। তিনি বলেন, পুলিশ বিভাগকে যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে এমন দাবি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর রাজনৈতিক কুপ্রভাব যেন না আসে বরং সুপ্রভাব আসে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
বাহারুল আলম বলেন, আমাদের মধ্যে সেই রিয়েলাইজেশনটা আসে যখন এসব চিত্র দেখি। যেসব ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি, পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো পুলিশ এ রকম করেনি। সেনাবাহিনী হয়তো যুদ্ধ করতে গিয়ে...পুলিশ এত নির্মম হতে পারে আমি ধারণা করতে পারিনি। আমরা ওই জায়গা থেকে বের করে আনার জন্য, ওইটা তারা কেন করতে গেলেন, এ রকম দলীয় কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাদের এভাবে আদেশ দেয়া হলো। ভূমিকাটা এ রকম হয়ে গেল যে, মানুষকে হত্যা করা। আমরা আগে কাউকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে একটা মামলা দিয়ে ভেতরে রেখে দিয়েছি। কিন্তু একেবারে গুলি করে মেরে ফেলা! ফর দিস রিজন! এটার জন্য আমার কাছে কোনো জবাবই নেই। এই পর্যায়ে আমরা চলে গেছি, এটা থেকে উত্তরণটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, কষ্টকর একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। শুধু পুলিশ নয়, সমাজের লোকের মধ্যেও একই অবস্থা হয়েছে। পুলিশের প্রতি ঘৃণা এত বেশি বেড়ে গেছে যে মানুষ নিতে পারছিল না। এ জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা শুনছেন।
আইজিপি বলেন, সমাজের কিছু অসাধু লোক, নেতা এবং প্রভাবশালীরা নিরীহ লোকদের মামলার আসামি করছে, এটি প্রচণ্ড উদ্বেগের ব্যাপার। তবে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাদের হয়রানি করা না হয়। এর মধ্যে যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, তাদের আশ্বস্ত করার জন্যও বলা হচ্ছে। দরকার হলে ফোন দিয়ে নিরীহ লোকদের বলা, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না, হয়রানি করা হবে না।
আইজিপি আরো বলেন, আন্দোলন–সংগ্রামে যারা মারা গেছেন, তার পিতা কিংবা আত্মীয়কে প্রভাবান্বিত করে সমাজের কিছু অসাধু লোক ১০ জনের জায়গায় ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করছেন। এখন আইনে যেটা আছে, কেউ যদি মামলা করে তাকে আমরা বন্ধ করতে পারি না। আমাদের যে প্রচলিত আইন সেটাতে আমরা বলতে পারি না যে আপনি তের শ কেন দিয়েছেন, তিনজনকে দেন। এটা আইনত বলা যায় না। আইন আসলে আমাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি।
অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ব্যাপারে বাহারুল আলম বলেন, সারা দেশে এখনো প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বের করা কঠিন। পুলিশ যদি সমাজের লোকের উপকার করতে পারে তখন তারাই অস্ত্রের সন্ধান দেবেন। তখনই অস্ত্রগুলো বেরিয়ে আসবে। এ জন্য গোয়েন্দা লাগিয়ে মাটি খুঁড়ে বের করতে হবে না। ওই জায়গা হচ্ছে সব থেকে সহজ। মানুষজনের মধ্যে কেউ না কেউ দেখে বা জানে। সে ক্ষেত্রে মানুষজন থানায় গিয়ে যে তথ্য দেবে এমন কনফিডেন্স এখনো তৈরি হয়নি। মানুষের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত। তবে পুলিশের রুটিন কাজ চলবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মতবিনিময় সভায় আইজিপি ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সংবাদকর্মীর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মামলা গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলাটির ব্যাপারে তিনি চোখ রাখবেন। এ সময় সিলেটের রেঞ্জ ডিআইজি মুশফেকুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সিলেট রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আইজিপি।