পিলখানায় আয়নাঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই : বিজিবি সদর দপ্তর
যুগের চিন্তা ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভেতরে আয়নাঘর ছিলো দাবি করে বাহিনীর বরখাস্ত সিপাহি শাহীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে অভিযোগ দিয়েছেন তা নজরে এসেছে বিজিবি সদর দপ্তরের। বিজিবি বলছে, পিলখানায় আয়নাঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ এনে দেশপ্রেমিক বিজিবিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিজিবির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এমনটি দাবি করা হয়।
এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের শৃঙ্খলা, পেশাদারত্ব এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সর্বদা দেশের সুরক্ষা করে চলেছে। কিন্তু সম্প্রতি বরখাস্ত সিপাহি শাহীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিজিবির বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন- যা একান্তভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন। বরখাস্ত সিপাহি শাহীনের বিরুদ্ধে বিজিবির শৃঙ্খলা ও মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি গুরুতর অপরাধের প্রমাণ রয়েছে।
পোষ্টে আরো বলা হয়, শাহীন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ও স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উম্মে তাসনিম ও খাদিজা নামে আরো দুই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেন- যা শাস্তিযোগ্য অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
বিজিবি ওই পোস্টে আরো জানিয়েছে, বরখাস্ত সিপাহি শাহীন সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে অত্যন্ত ধার্মিক হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং অভিযোগ করেন তাকে ধর্ম পালনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিলো- যা সত্য নয়।
বিজিবি জানায়, একজন ধার্মিক ব্যক্তির পক্ষে এরূপ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ একটি বিষয়। এছাড়াও বরখাস্ত সিপাহি শাহীন অনুমতি ব্যতীত পেশাগত পরিচয় গোপন করে কৃষক সেজে জাতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান। অপর একটি গুরুতর বিষয় হলো তিনি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সমর্থিত নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, যা দেশ ও বাহিনীর নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। শাহিনের বড় ভাই আবু হুরায়রা এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে রাঙ্গামাটি জেলে আটক ছিলেন বলে জানা যায়।
গুম হওয়ার বিষয়ে শাহীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত জানিয়ে বিজিবি বলছে, বিভাগীয় তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে সম্পূর্ণ সময় তিনি রামগড় বিজিবি ব্যাটালিয়নের কোয়ার্টার গার্ডে অবস্থান করেছিলেন এবং ব্যাটালিয়নের সব সদস্যের চোখের সামনেই ছিলেন। বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি নিয়মিত বেতনও নিয়েছেন। সেখানে তিনি প্রায়ই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যাটালিয়ন ক্যান্টিনের মোবাইলে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। পিলখানায় অবাস্তব আয়নাঘরের অভিযোগ এনে তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশপ্রেমিক বিজিবিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। বিচার চলাকালীন তাকে কখনোই বিজিবি সদরদপ্তর পিলখানায় আনা হয়নি।
বিজিবি আরো জানায়, বিজিবিতে সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ বিজিবি আইন ও তদন্তের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। শাহীনের বিরুদ্ধেও একই প্রক্রিয়ায় বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম ও বর্ডার গার্ড আদালতের মাধ্যমে তার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। বিজিবির বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আইনগত। কিছু অদৃশ্য মহল সীমান্তে টানটান উত্তেজনা চলাকালীন এই ক্রান্তিকালে বিজিবির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, যা বিজিবির ভাবমূর্তি ও শক্তিকে খর্ব করার হীন অপচেষ্টা মাত্র।
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, বিজিবি দেশের সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় আপসহীন। আমাদের বাহিনী অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যে কোনো অপরাধী বা দুর্নীতিবাজ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বিজিবি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।