শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতকে কড়া বার্তা সারজিসের
যুগের চিন্তা ২৪ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম জানিয়েছেন, বিচারের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ উত্তোলনের যদি প্রয়োজন না হয়, তাহলে ২৪-এর অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছে, বিচারের জন্য কেন তাদর লাশ উত্তোলন করতে হবে। ২৪-এর অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছে, হত্যা মামলাগুলোর জন্য তাদের লাশ উত্তোলন করা যাবে না বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে হওয়া ‘শহীদ পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের মধ্যে চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা জানান।
সারজিস বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার যে মন্ত্রণালয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে একটি কথা বলতে চাই- যে ভাই তার জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। তার রক্তের বিনিময়ে আপনি ওই চেয়ারগুলোতে বসে রয়েছেন। ক্ষতবিক্ষত বুক নিয়ে যে বাবা, মা, ভাই, বোন, যে সহধর্মিনী বেঁচে রয়েছে, চোখের সামনে তাদের ক্ষতবিক্ষত কলিজার লাশ উত্তোলন করতে পারেন না।’
তিনি বলেন, আমরা দালাল নই। ক্ষমতা পিপাসু নই। এ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিশ্বাসের সঙ্গে বেঈমানি করিনি। ইভেন ড. ইউনুসও যদি হয় তাকেও আমরা ছেড়ে কথা বলব না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী হবে, তা তাদের কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইলে ভারতকে খুনি হাসিনাকে আশ্রয় না দিয়ে ফেরত দিতে হবে। এ বাংলাদেশের মানুষ জনগণ তার বিচার করবেন।
এখনো আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানের চারমাস পেরিয়েছে। খুনি হাসিনার অন্যতম দোসর নাটোরের খুনি এমপি শিমুল আজও আমাদের সামনে রয়েছে। আজও পাবনার সাঈদ চেয়ারম্যান, এই বাংলাদেশে তার অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ এ খুনিরা প্রকাশ্যে আমার ভাইদেরকে পুড়িয়ে মেরেছে, গুলি করে হত্যা করেছে। তাহলে বাংলাদেশের ওই বিচারব্যবস্থা, পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা আছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-বিচার ব্যবস্থার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন যে শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আজকে আপনারা উপদেষ্টা, পুলিশ সুপার, আইজিপি, ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার- তাদের রক্তের সঙ্গে এই বেঈমানি কীভাবে সম্ভব?’
তিনি বলেন, এই গণহত্যার সঙ্গে আমরা পুরো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে জড়িয়ে দেব। কিন্তু এই দায়সারা কথা আমরা কখনও শুনব না- খুনি হাসিনা হুকুম দিয়েছে বলে আমি গুলি করেছি। হাসিনা যদি গুলি চালানোর হুকুম দেয়, তাহলে একজন ব্যক্তি হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে আপনার বিবেক বোধ, দেশের প্রতি যে আপনি শপথ নিয়েছেন সেই মনুষ্যত্ব, সেই বিবেক বোধ কোথায় ছিল। যারা ওই বিবেক বোধকে, মনুষ্যত্বকে জাজমেন্টটুকু করতে পারেননি। যে কতিপয় কু-পুলিশ সদস্য সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, যাদের হত্যাকাণ্ডের সরাসরি ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্টগুলো পাওয়া যায়; তাদের কেন বিচার হচ্ছে না? ওই কতিপয় কু-পুলিশ সদস্যকে পোস্টিংয়ের নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। খুনের শাস্তি কি বদলি? খুনের শাস্তি কি এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি?’
সারজিস আলম বলেন, এই বাংলাদেশে আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি- অনেক পুলিশ সদস্য, পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক অফিসার সেই মামলাগুলো নিচ্ছে না। যে মামলাগুলো তাদের পুলিশের বিভিন্ন সদস্যের নামে রয়েছে। আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে এই মামলাগুলো বিভিন্ন জায়গায় পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই খুনি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের অনেককে টাকার বিনিময়ে, ম্যানপাওয়ারের বিনিময়ে বাঁচানোর জন্য তারা টাকার বিনিময়ে নেগেসিয়েশন করছে। পুরো দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই মামলা বাণিজ্য। এই মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে যেমন রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে; তেমনি পুলিশ, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছে।