আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই দিনে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ এবং বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।’
রাষ্ট্রপতি জাতির সূর্যসন্তান, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শহীদ পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে।’
বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের জঘন্যতম প্রতিশোধ নেয়।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যেকোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বাণীতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
শনিবার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন।
এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা শনিবার বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জামায়াতের প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আলোচনা সভা, র্যালি ও দোয়ার মাধ্যমে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করার জন্য আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সব শাখা ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও।