ঢাকাবাসীর সেবক হিসাবে কাজ করতে চাই : ডিএমপি কমিশনার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকাবাসীর জন্য সেবক হিসাবে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, কোনো ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ বা জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। যেখানে আগে জিডি হবার ৪৮/৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ অফিসাররা সাড়া দিত। এখন সেখানে এক ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগকারীরর কাছে হাজির হয়ে অভিযোগ শুনবেন। গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন পুলিশ অফিসাররা।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আমি একজন সেবক। আমি রেভিনিউ, ট্যাক্স কালেক্টর না। আমার কাজ জনগণকে সেবা দেওয়া। তেজগাঁও থানায় ৫০০ মামলা হোক সমস্যা নেই। সেজন্য আমি কমিশনার জবাবদিহি করবো। কেন ৫০০ মামলা হলো। সেটার জবাব আমি দিবো। মামলা হোক, জিডি হোক সমস্যা নাই কিন্তু কোনো ঘটনা যেন হাইড না থাকে। যে ঘটনায় মামলা হবার কথা সেটার জন্য মামলাই নিতে হবে, যেটার জন্য জিডি নেবার কথা সেটার জিডিই হতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকাবাসীকে দ্রুত সেবার দেওয়া জন্য প্রতিটি থানা এলাকায় আমরা নতুন একটি টিম গঠনে কাজ করছি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হবে। সেজন্য নতুন লোক প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের থানায় থানায় পাঠানো হবে। আমি চাই সেবা প্রদানে রেসপন্স টাইম কমে নিয়ে আসা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশী সহায়তা পাবেন। আগে জিডি হবার পরে ৪৮/৭২ ঘণ্টা পর তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগ করতো বা ঘটনাস্থলে যেতো। কিন্তু এখন সেসময় পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করতে না হয়, জিডি নথিভুক্ত হবার ১/২ ঘণ্টার মধ্যে অফিসার যেভাবেই হোক ঘটনাস্থলে যাবেন বা অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
চাঁদাবাজির জন্য নিত্য পণ্যের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকাবাসির সহযোগিতা ছাড়া চাঁদাবাজি বন্ধ করা কঠিন। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। চাঁদাবাজির কারণে নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে যদি সমাজ থেকে প্রতিবাদ গড়ে তোলতে হবে। আপনারা চাঁদা দিবেন না। যারা চাঁদা নিতে আসেন তারা কি ভাবে চাঁদা নেয় সেটা আমরা দেখবো। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। দ্রুতই আপনারা দেখতে পারবেন।
মিথ্যা মামলা ও মামলা দিয়ে চাঁদাবাজির এবং হয়নারি করা পুলিশ সদস্য ও মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। যিনি আমার লোক হোক আর মামলার বাদী যদি তথাকথিত ব্যক্তিদের আসামি করে যারা চাঁদাবাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। যেসব লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে না।
জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিংহভাগ মামলা আদালতের মাধ্যমে হয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মামলায় অনেকে জড়িত ছিল না গুটি কয়েক লোক জড়িত ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মামলার বাদী একশ লোকের কাছে গিয়ে টাকা চাচ্ছে। আমরা বলব, তাদের ভয়ের কিছু নাই, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, আমরা শুধু তাদের গ্রেপ্তার করব।
মামলার বাদী ছাড়াও পুলিশ ও এমন কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা বাণিজ্যে অনেক পুলিশ সদস্যদের নাম পাওয়া গেছে। আমাদের কাছে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি রবিবার অলরেডি একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।
ঢাকার ট্রফিক ব্যবস্থাপনার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরজন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, ঢাকায় কমবেশি ২ কোটি লোকের বসবাস। পৃথিবীতে এতো ঘনবসির শহর আছে বলে জানা নাই। নাইজেরিয়ার, দিল্লি, মোম্বে এ ধদরনের শহর বলে জানা আছে। ডাকায় নানাবিধ সমস্যা। সীমিত রিসোর্স নিয়ে ২ কোটি লোকের সেবা। পবিত্র দায়িত্ব আমার উপর ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখা। আমাদের শহরের রাস্তাঘাট সীমিত। একটি আদর্শ শহরে রাস্তা থাকা উচিৎ ২৫ ভাগ, আমাদের ৭ ভাগ। এমন অবস্থায় অটোরিকশা ও হকাররা ফুটপাত-রাস্তা দখল করে রাখছে। এরূপ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ট্রাফিকের অব্যস্থাপনা থেকে উত্তরনের জন্য যারা রাস্তা ব্যবহার করেন, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। অনেকটাই লাঘব হবে। স্কুলের সময় ব্যপক যানজট। যদি বাসা ভাড়া হয়, অন্যত্র বাসা হলে প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া নেন।ওয়াকিং ডিসটেন্স। একইভাবে কর্মক্ষেত্র, প্রাইভেট হলে বাসার কাছে আনতে পারেন কি না। অনেকের গাড়ি ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে। হেঁটে যেতে পারবেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহযোগিতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন রাখবে।
ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, ভোরবেলা যাত্রী যখন নামে। তখন আমার পুলিশ সারারাত ডিউটি করে নেতিয়ে পড়ে। প্রতিরোধ করতে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করেছি যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।
নগরবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ শুনতে ডিএমপি সদর দপ্তরে একটি অভিযোগ সেল খোলা হবে। পাশাপাশি দ্রুতই ওপেন ডে আয়োজন করে নগরবাসী সমস্যা ও পুলিশের সেবার পরামর্শ নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।