বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কায় সারাদেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
ফাইল ছবি
বড় ধরনের সন্ত্রসী হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
কোথায় সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে নির্দিষ্টভাবে তা বলা না হলেও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করে এ দেশে তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্রগুলো বলেছে, ক্রমেই সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কাও রয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৫ আগস্ট থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, লুট হওয়া অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র হামলায় ব্যবহৃত হতে পারে। সেই সঙ্গে বোমা হামলার আশঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিষয় মাথায় রেখে ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি বাড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এক খুদে বার্তায় বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এতে বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা থেকে আখাউড়ামুখী লং মার্চ কর্মসূচি ঘিরে সীমান্তে উত্তেজনা থাকায় আখাউড়া সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসীরা হামলার চেষ্টা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্য। ঢাকায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়নবিষয়ক দপ্তর বাংলাদেশ ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শে এই সতর্কতা জানিয়েছে।
হালনাগাদ ভ্রমণ পরামর্শে বলা হয়েছে, নির্বিচার সন্ত্রাসী হামলা চালানো হতে পারে। জনাকীর্ণ এলাকা, ধর্মীয় স্থাপনা ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন জায়গায় এই হামলা হতে পারে। কিছু গোষ্ঠী এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করেছে, যাদের ইসলাম পরিপন্থী জীবনাচরণ ও মতামত রয়েছে বলে তারা মনে করে।
ব্রিটিশ ভ্রমণ পরামর্শে বলা হয়েছে, মাঝেমধ্যে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা হয়েছে এবং পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করা হয়েছে। প্রধান শহরগুলোতে এসব হামলায় বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত এসব হামলা নস্যাতে কাজ করে যাচ্ছে। স্বল্প সময়ের নোটিশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হতে পারে।
বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক করে যুক্তরাজ্য বলেছে, ‘চারপাশ সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে পুলিশের স্থাপনাগুলোর আশপাশে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বড় ধরনের সমাবেশ এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতিসংবলিত অন্যান্য জায়গা এড়িয়ে চলুন।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়, যাতে অনেক মৃত্যু ও বহু আহত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি এখনো অস্থির রয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ পরামর্শে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মিছিল ও সমাবেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে। এগুলো দ্রুত সহিংস হয়ে উঠতে পারে, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। দেশজুড়ে শহর ও নগরে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের সময় সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব ঘটনা প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার একটি প্রভাব পুলিশের ওপর পড়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে ব্রিটিশ ভ্রমণ পরামর্শে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে কিছু থানায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগ আবার সচল হয়েছে। তবে সব পুলিশ সদস্য কাজে ফেরেননি।
ঢাকা ও অন্যান্য শহরে অপরাধীচক্রের তৎপরতা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ পরামর্শে। বাংলাদেশে ডাকাতি, সহিংস অপরাধ ও ধর্ষণের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।