ইলিয়াস হোসেনের অভিযোগের জবাব দিলেন আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পিএম
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের তথ্য নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। সেখানে দাবি করা হয়, গত ৩-৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে ভারতের দালালদের সঙ্গে মিটিং করেছেন আসিফ নজরুল। এবার সেই অভিযোগেরই জবাব দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘স্মৃতির মিনার: গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক সভায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, খুবই দুঃখ ও অবাক লাগে যখন দেখি আজগুবি, ভিত্তিহীন, অকল্পনীয় তথ্য দিয়ে একজন আরেকজনের পেছনে লেগে আছে। একটা ভিডিওতে নাকি দাবি করা হয়েছে, আগস্টের ৩-৪ তারিখ রাতে আমি ক্যান্টনমেন্টে (সেনানিবাসে) ছিলাম। সেখানে আর্মি অফিসারদের নিয়ে ভারতের দালালদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই। মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘৩ আগস্ট রাতে মাহবুব মোর্শেদসহ (বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক) অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ১৯ নম্বর বিল্ডিংয়ে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় থেকেছি। আশঙ্কা ছিল, আমাকে মেরে ফেলবে, না হলে গ্রেফতার করবে। আর ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পরে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। যার অডিও আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যেখানে আমি বলেছিলাম, আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সবাই আমাদেরকে বলেছে পালিয়ে যেতে। তারপর সেদিন রাতেও ঢাবি শিক্ষক মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম। সবকিছুর একটা সীমা আছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকবে। আমরা একজন আরেকজনের কাজের সমালোচনা করব। কিন্তু মিথ্যা কথা কেন বলব? মানুষজন আমাকে বলে আপনি অভিযোগের বিষয়ে ক্লিয়ার করেন। আমি বলি, আমি কি ক্লিয়ার করব? সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করে। আজগুবির একটা সীমা থাকা দরকার। অবশ্য এমনটি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের সমালোচনা করবেন ঠিক আছে। যখন ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করবেন তখন মনে হয় সমালোচনাটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা, এই সরকারকে শক্তিহীন করা। আন্দোলনকারি মানুষের মধ্যে অনৈক্য নিয়ে আসা, দেশকে অস্থিতিশীল করা, পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার জন্য এগুলো করা হচ্ছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশের স্ক্রিপ্ট আছে না? শেখ হাসিনা চলে গেলে দেশ আর কেউ চালাতে পারবে না। অথবা দেশ উগ্রবাদিদের খপ্পরে পড়বে। তার (শেখ হাসিনার) কোন বিকল্প নেই। ওই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ। না হলে তাদের কি স্বার্থ? বিগত প্রায় ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কি করেছে? আমাদের পরামর্শ দেন আমরা কি করবো।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদেরকে যদি আরো সমর্থন করেন, ঠিক মতো গাইড করেন, এই সরকার যদি সফল হয়, তবেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রত্যার্বতনের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে পারব। জুলাই-আগস্টে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের অত্মদানের মিনিমাম একটা মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের প্রত্যাশাকে এগিয়ে নিতে পারব।’
এর আগে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ‘পুলিশ, আনসারের সমম্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ইলিয়াস হোসেন। ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতেই তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।