রোমে ‘পোপ ফ্রান্সিস ইউনূস ত্রি-জিরো ক্লাব’ উদ্বোধন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম
ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোমে যৌথভাবে ‘পোপ ফ্রান্সিস-ইউনূস ত্রি-জিরো ক্লাব’ উদ্বোধন করেছেন।
মানবতার জন্য একটি রূপান্তরমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গড়ার সূচনা প্রয়াস হিসেবে এই ক্লাব উদ্বোধন করা হয়েছে।
উন্নত উদ্ভাবনী ধারণার বিকাশ এবং বাস্তব ও টেকসই সমাধানের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘ত্রি-জিরো ক্লাব’ রোমের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের জন্য আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।
রোমের ভিকার জেনারেলের (পোপের পরে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা) কার্ডিনাল বাল্ডো রেইনা’র কাছে এক চিঠিতে অধ্যাপক ইউনুস বলেছেন, তিনি এই উদ্যেগে ‘গভীরভাবে সম্মানিত’ হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং শনিবার (১৬ নভেম্বর) জানিয়েছে, এ উপলক্ষে তিনি কার্ডিনাল রেইনাকে তার ‘আন্তরিক অভিনন্দন’ জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেছেন, ‘এই অসাধারণ উদ্যোগটি মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি রূপান্তরমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের জন্য আমার নিজের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত করে।’
তিনি লিখেছেন, ‘এই উদ্যোগটি কেবল শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয় বরং সহমর্মিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও স্থায়িত্বের ভিত্তিতে একটি নতুন সভ্যতার উত্থানকে উৎসাহিত করার আকাঙ্খাও লালন করে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি সভ্যতা যেখানে কাউকে পিছিয়ে রাখা হবে না, বরং যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি তার ভাগ্যের নায়কও হতে পারবে, একই মানব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে গর্বিত বোধ করবে, যেমনটি মহামান্য পোপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জোর দিয়েছেন।’
‘তার এনসাইক্লিক্যাল ‘ফ্রাতেল্লি তুত্তি’তে পোপ লিখেছেন, ‘আসুন, আমরা স্বপ্ন দেখি, তাহলে, একটি একক মানব পরিবার হিসাবে, একই রক্ত-মাংসের মানুষ ও পরিব্রাজক হিসেবে, আমাদের সবার অভিন্ন আবাস একই ধরিত্রীর অপত্য হিসেবে, প্রত্যেকেই যার যার প্রতীতি ও প্রত্যয়ের উৎকর্ষ নিয়ে আমরা প্রত্যেক ভ্রাত্রা ও ভগ্নি সকলেই নিজ নিজ কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করতে পারব।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের অবিচল অঙ্গীকার এবং সামাজিক ব্যবসার শক্তিতে আমার বিশ্বাসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ত্রি-জিরো ক্লাব তরুণ মনকে এমন সব প্রকল্প কল্পনা করতে এবং বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত করে যা অর্থবহ পরিবর্তন আনবে।’
তিনি বলেন, ‘এই তরুণ নেতাদের সৃজনশীলতা ও উদ্যমী মনোভাব সযত্নে বিকশিত করে তাদের অধিকতর ন্যায়পরায়ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের স্থপতি হওয়ার জন্য আমরা ক্ষমতায়ন করছি।’
পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি তার ‘গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা’ জ্ঞাপন করে অধ্যাপক ইউনূস ‘সবাইকে একযোগে এই রূপান্তরকামী অভিযাত্রা শুরু করার আহ্বান জানিয়ে আগামী প্রজন্মকে এমন একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেন যা প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা সমুন্নত করবে এবং এবং আমাদের গ্রহের পবিত্রতা অক্ষুণ্ন রাখবে।’
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বর্তমানে নতুন সভ্যতার জন্য অধ্যাপক ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অনুপ্রাণিত কমপক্ষে ৪ হাজার ৬০০টি থ্রি-জিরো ক্লাব রয়েছে। এর অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সূত্র : বাসস