শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ছবি : সংগৃহীত
আজ ২৬ জুন বুধবার, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের আজকের দিনে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানাই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রেরণার উৎস। আজ সকাল ৮টায় ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জাহানারা ইমাম ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। তিনি বাংলাদেশে ‘শহীদ জননী’ হিসেবে পরিচিত। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। বইটি দিনলিপি আকারে লেখা, যার শুরু ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ এবং শেষ ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা শহরের অবস্থা ও গেরিলা তৎপরতার বাস্তব চিত্র এ গ্রন্থে তুলে ধরেন তিনি। বইয়ের প্রধান চরিত্র তার বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমী। রুমী মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি গেরিলা অপারেশন পরিচালনার পর পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর রুমীর বন্ধুরা জাহানারা ইমামকে সকল মুক্তিযোদ্ধার মা হিসেবে বরণ করে নেন। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্রেই তিনি শহীদ জননীর মর্যাদায় ভূষিত হন।
১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। তার নেতৃত্বে এই কমিটির মাধ্যমে ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণ-আদালতের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার সম্পাদন করা হয়।
জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের কান্দী মহকুমার সুন্দরপুর গ্রামে রক্ষণশীল বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মায়ের নাম সৈয়দা হামিদা বেগম। তার স্বামী বিখ্যাত স্থপতি শরিফুল আলম ইমাম। তিনি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মৃত্যুবরণ করেন।
শহীদ জননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি
শহীদ জননীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছরের মতো এবারও আজ বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’, আলোচনা সভা এবং ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করবেন প্রধান বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান। তার বক্তৃতার বিষয় : ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী।
এ বছর ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাগরিক আন্দোলনের নেতা বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজা খানম এবং সংগঠন হিসেবে ‘এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অফ দ্য কমন পিপল (এলকপ)’-কে জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, এলকপ সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও নির্মূল কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এম সাঈদ আহমেদ রাজা।