ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশজুড়ে শহিদ ৭৩৭, আহত ২২৯০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
ফাইল ছবি
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে (৬ অক্টোবর পর্যন্ত) মোট শহীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭৩৭ জন এবং আহতের সংখ্যা ২২৯০৭ জন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রনয়ণ এবং শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের একটা প্রাথমিক তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে।
প্রস্তুতকৃত তালিকা সর্বসাধারণের যাচাইয়ের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ডাটাবেইজ তৈরির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
নূরজাহান বেগম বলেন, যারা আহত হয়েছেন বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তার, মেডিকেল টিম এনে (চীন, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ হতে) চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের এডভান্স মেডিকেল টিম বাংলাদেশে এসেছেন। তারা হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও, বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত চক্ষু রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য সেবা ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্যোগে নেপাল থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ও ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাঁও, ঢাকায় এসেছেন। এ ছাড়া, আজ ফ্রান্স থেকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসছেন। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন ১৫ দিনের ভেতর যুক্তরাজ্য থেকে অর্থোপেডিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে আসবেন।
নেপাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎকগণ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মোট ১৯২ জনকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এবং ৪ জন জটিল রোগীর অপারেশন করেছেন।
ইনজুরড রেটিনা রোগীদের রেটিনার অস্ত্রোপচার শেষ হলে প্রায় ছয়মাস পর কর্ণিয়া অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কর্ণিয়া সরবরাহে সেবা ফাউন্ডেশন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসমূহে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও অন্যান্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া DNCC ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গুর দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে প্রতিরোধ, আরেকটি চিকিৎসা। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন করতে পারি তাহলে ডেঙ্গুর প্রতিকার সম্ভব।
এ ছাড়া দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু বিষয়ে ‘ফোকাল পারসন’ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ডেঙ্গু টেস্ট কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য লজিস্টিকের স্টক এবং চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানদের ডেঙ্গু অ্যাপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা ডেঙ্গু ট্র্যাকার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষাকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষার ফলাফল সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ. টি. এম. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।