রপ্তানি বন্ধ তবু ইলিশের দাম কমছে না
ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। ভারতে রপ্তানিও বন্ধ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। তবু দাম চড়া। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে সাধারণ মানুষ এই মাছ কেনার কথা ভাবতেই পারছে না।
তাদের প্রশ্ন, রপ্তানি বন্ধ থাকার পরও ভরা মৌসুমে ইলিশের এত দাম কেন?
মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা সাগরে ইলিশের ঘাটতি, ইলিশ ধরার খরচ বৃদ্ধি এবং রুক্ষ আবহাওয়াকে উচ্চ মূল্যের জন্য দায়ী করেছেন।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের মোহনা হয়ে খাপড়াভাঙ্গা নদীর খাড়ি দিয়ে একের পর এক ট্রলার ঢুকছে। ট্রলারের পেট থেকে বের করে ইলিশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেটিতে। তবে যেসব ইলিশ দেখা যাচ্ছে তার বেশির ভাগই ছোট।
দরদাম শেষে জেটি থেকে কর্কশিটের পেটিতে বরফচাপা হয়ে ইলিশ উঠছে ট্রাকে। এখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজার হয়ে ইলিশ যাবে রান্নাঘরে।
বঙ্গোপসাগরফেরত জেলেদের কাছে ছোট ইলিশ ধরার কারণ জানতে চাওয়ায় তারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, বড় ইলিশ কই?
ইলিশের চড়া দামের কারণ জানতে চাইলে সরবরাহ ঘাটতির কথা বলেন মহিপুর বিএফডিসির ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫২ টন ইলিশ জেলেরা এই ঘাটে এনেছিলেন।
তবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ টন ইলিশ ঘাটে এসেছে। ইলিশ মৌসুমে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে আবহাওয়ায়। তাই জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি। সে কারণেই মাছ আসেনি ঘাটে।
বরিশাল পোর্ট রোড ইলিশ বাজারে প্রতিদিন সকালে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
দাম শুনে শামীম হোসেন নামের এক ক্রেতা ব্যঙ্গ করে বললেন, ‘লাল চোখ ওয়ালা ইলিশের দর শুনে মনে হচ্ছে, কীর্তনখোলা থেকে ধরে সরাসরি নিয়ে আসা হয়েছে পোর্ট রোড বাজারে! বঙ্গোপসাগরের পুরনো লাল ইলিশের না আছে স্বাদ, না আছে গন্ধ! তা-ও কেন এত দর, কিছুই বুঝছি না, ভাই।’
পোর্ট রোডের আড়তদার জহির সিকদার জানান, বন্যা ও বৃষ্টির সময় নগরীর পোর্ট রোড মোকামে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ বেচাকেনা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ১০০ থেকে ১৫০ মণের বেশি ইলিশ বাজারে ওঠে না। এ কারণে দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে।
তিনি জানান, গতকাল বুধবার পোর্ট রোডে এক কেজি আকারের ইলিশ এক হাজার ৮০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম আকারের ইলিশ এক হাজার ৬০০ এবং ছোট আকারের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, আগের বছরগুলোতে সরকার দুর্গাপূজা ঘিরে বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিত। তবে দেশে ঘাটতি বিবেচনায় সরকার এ বছর ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ইলিশের দাম হাতের নাগালে থাকার কথা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ইলিশের আহরণ অনেকটাই কম। তা ছাড়া ইলিশ শিকারে রসদের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ফেলেছে দামে। তার ওপর বিরূপ আবহাওয়া জেলেদের বিপাকে ফেলেছে। ফলে সাধারণের নাগালে আসছে না ইলিশ।