প্রার্থী ও কর্মকর্তাদের স্বস্তিতে প্রস্তুতির সময় বাড়াল নির্বাচন কমিশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২০ পিএম
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের তারিখের মধ্যে দীর্ঘ ব্যবধান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও প্রার্থী—উভয় পক্ষকেই প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত সময় দেবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, এই বাড়তি সময় নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে আরও গুছিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের মধ্যকার ব্যবধান ৬৩ দিন, যা ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সর্বোচ্চ। ওই নির্বাচনে এই ব্যবধান ছিল ৭৪ দিন। তবে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এই ব্যবধান ছিল তুলনামূলক কম—৩৯ থেকে ৫৯ দিনের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, সময় বাড়ানোর মূল লক্ষ্য হলো প্রার্থীদের আরও স্বস্তি ও প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া। ব্যবধান দীর্ঘ হওয়ায় তাড়াহুড়ো কমবে এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ তাদের দায়িত্ব আরও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারবে।
তিনি জানান, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে কারণ আগের তুলনায় এবার প্রার্থীদের বেশি নথিপত্র জমা দিতে হবে। এতে অযথা চাপ কমবে এবং প্রার্থীরা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের সময় কম থাকা নিয়ে আগে অভিযোগ ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সে কারণে রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির সময়ও বাড়ানো হয়েছে।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারির মধ্যে যাচাই-বাছাই করবেন রিটার্নিং অফিসাররা। ১১ জানুয়ারি আপিলের শেষ দিন। ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি হবে। ২০ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু হবে, যা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
ইসির নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার জন্য সময় ছিল ১৫ দিন। এবার তা বাড়িয়ে ১৮ দিন করা হয়েছে। পাশাপাশি কাগজপত্রের পরিমাণও বেড়েছে। প্রার্থীদের এখন শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যায়িত কপি, চলমান ফৌজদারি মামলার বিবৃতি, অতীতের মামলার রেকর্ড ও রায়ের বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া পেশা বা ব্যবসার তথ্য, আয়ের সম্ভাব্য উৎস, নিজস্ব ও নির্ভরশীলদের সম্পত্তি ও ঋণের বিবরণ, ব্যক্তিগত বা যৌথ ঋণের তথ্য এবং আগের নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও তা বাস্তবায়নের অগ্রগতিও জানাতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী, দেশে ও বিদেশে আয়ের উৎস এবং দেশ-বিদেশে সম্পত্তি ও ঋণের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মনোনয়ন যাচাইয়ের সময়ও বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে চার দিন সময় ছিল, এবার রিটার্নিং অফিসাররা ছয় দিন পাবেন। আপিলের সময় পাঁচ দিন থেকে বাড়িয়ে সাত দিন করা হয়েছে এবং আপিল নিষ্পত্তির সময়ও ছয় দিন থেকে বাড়িয়ে সাত দিন করা হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, আপিল শুনানি একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচ কমিশনারের সামনে শুনানি হয় এবং পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় দিতে হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে মাত্র ছয় কার্যদিবসে ৫৬৯টি আপিল নিষ্পত্তি করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছিল।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম এসব পরিবর্তনকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তাঁর মতে, অতিরিক্ত সময় থাকায় প্রার্থীরা আরও সতর্কভাবে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে পারবেন, ফলে ভুলের কারণে মনোনয়ন বাতিলের ঘটনাও কমবে। একই সঙ্গে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ওপর কাজের চাপও হ্রাস পাবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ২ হাজার ৭১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, যদিও অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জমা পড়েছিল ৩ হাজার ৫৬টি মনোনয়নপত্র। সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচন হলেও, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনের মাত্র দুই বছর পরই এবার নির্বাচন হচ্ছে। গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।



