Logo
Logo
×

জাতীয়

২৬তম প্রধান বিচারপতি হওয়ার পথে যারা আলোচনায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

২৬তম প্রধান বিচারপতি হওয়ার পথে যারা আলোচনায়

ছবি : সংগৃহীত

আগামী ২৭ ডিসেম্বর দেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অবসরে যাচ্ছেন। তার অবসরের পর দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নজরে এসেছে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। যদিও সংবিধানে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই যে, কাকে প্রধান বিচারপতি করতে হবে, দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী সাধারণত আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিরা এই পদ অলঙ্কৃত হন। তবে প্রায়ই কর্মদক্ষতা এবং বিচারিক যোগ্যতার দিক থেকেও প্রধান বিচারপতি পদে বিচারপতিদের নিয়োগের নজির রয়েছে।

বর্তমানে আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ সাতজন বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি অবসরে গেলে আপিল বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮। সিনিয়রিটি এবং কর্মদক্ষতার দিক বিবেচনায় দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৫ জুলাই ১৯৫৯ সালে। তার পিতা ছিলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম নূরুল ইসলাম এবং মাতা জাহানারা আরজু, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি। শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম দিয়ে, এরপর ভারত থেকে এফআইসিপিএস সম্পন্ন করেন। আইন পেশায় যোগ দেন ১৯৮৩ সালে জেলা আদালতে। ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ২০০৫ সালে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম দেশের আইনাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, ইতালি, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, কাজাখ রিপাবলিক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, নেপালভুটান

তিনি একাধিকবার প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং আপিল বিভাগের চেম্বারকোর্টের বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ রায়ে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড প্রদান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) এবং ২০০৫ সালে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের নির্দেশ। তার স্বাভাবিক অবসর হবে ১৪ জুলাই, ২০২৬। ফলে প্রধান বিচারপতি হলে দায়িত্ব পালনের সম্ভাব্য সময় হবে সাড়ে ছয় মাস।

দ্বিতীয় সম্ভাব্য প্রার্থী বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮ মে ১৯৬১, পিতা ছিলেন প্রয়াত এএফএম আব্দুর রহমান চৌধুরী। শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম দিয়ে, এরপর যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর মাস্টার্স করেন। ১৯৮৫ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৩ সালে এবং ২০০৫ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ১৩ আগস্ট ২০২৪। তার গুরুত্বপূর্ণ রায়ে রয়েছে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা, নারী নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়ার অধিকার, ১৫০ দিনের বেশি অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাখা অবৈধ ঘোষণা, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় অবৈধ ঘোষণা। তিনি আপিল বিভাগের চেম্বারকোর্টেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বাভাবিক অবসর ১৭ মে ২০২৮, যা তাকে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদান করবে।

তৃতীয় সম্ভাব্য প্রার্থী বিচারপতি মো. রেজাউল হক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৪ এপ্রিল ১৯৬০, আইনশাস্ত্রে এলএলবি এবং কলা-এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে ১৯৯০ সালে অন্তর্ভুক্ত হন। হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হন ২৩ আগস্ট, ২০০৪ এবং স্থায়ী বিচারপতি হন ২ আগস্ট, ২০০৬। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ১৩ আগস্ট, ২০২৪।

তার গুরুত্বপূর্ণ রায়ে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, ক্ষমতাচ্যুত নেতাকর্মীদের জামিন স্থগিতকরণ, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল আদেশ এবং ধর্ষণ মামলায় প্রমাণের ভিত্তিতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আদেশ।

বাকি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি এসএম ইমদাদুল হক, এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং ফারাহ মাহবুব। যদিও তারা সিনিয়র নয়, তবে কর্মদক্ষতার ভিত্তিতেও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের সম্ভাবনা থেকে যায়।

সংবিধান স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করেছে। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী আপিল বিভাগের সিনিয়রতম বিচারপতিরাই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনও সুপারিশ করেছে, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিই সাধারণত এই পদে নিয়োগ পাবেন, যদিও গুরুতর অভিযোগ থাকলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সিনিয়র বিচারপতিও নির্বাচিত হতে পারেন।

এইবারের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, কারণ তার সময়কালে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ ছাড়া সংবিধান অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তিনি পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকাও পালন করতে পারেন। তাই, আগামী ২৭ ডিসেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাতে দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজরকাড়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যেকোনো একজন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে অনিশ্চয়তা থাকলেও, সর্বাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে দেখা হচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজন দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

 

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন