Logo
Logo
×

জাতীয়

অকেজো ইভিএমে কোটি টাকার চাপ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৫ পিএম

অকেজো ইভিএমে কোটি টাকার চাপ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আরপিও থেকেও ইভিএম-সংক্রান্ত বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও, মাঠপর্যায়ে ‘প্রায় অকেজো’ এসব যন্ত্র সংরক্ষণে প্রতি মাসে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা গুদামভাড়া দিতে হচ্ছে ইসিকে। পাশাপাশি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)-এর ওয়্যারহাউসে ইভিএম সংরক্ষণের বকেয়া হিসেবে ৬২ কোটি টাকার দাবি ঝুলে আছে, যা প্রকল্পের অনুমোদিত খাতে না থাকায় পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ইসি–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ১০ বছরের আয়ুষ্কাল ধরে কেনা এসব যন্ত্রের বেশির ভাগই ৫ বছরের মাথায় বিকল হয়ে পড়ে। বর্তমান কমিশন আরপিও সংশোধন করে ইভিএম অধ্যায় বাদ দেওয়ায় এসব যন্ত্রের ভবিষ্যৎ কার্যত ঝুলে গেছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ইভিএম নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। তাদের সিদ্ধান্ত এখনো কমিশন জানে না। সরকারকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইসি সূত্র আরও জানায়, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নয় অঞ্চলের ৪১ জেলায় গুদাম ভাড়া করে ইভিএম রাখা হয়েছিল। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ধাপে ধাপে এসব গুদাম ভাড়া নেওয়া হয়। ভ্যাটসহ জুন পর্যন্ত মোট ভাড়া পরিশোধ হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা—অর্থাৎ মাসে গড়ে ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রতিটি গুদামের ভাড়া প্রতি বর্গফুটে ৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে কিছু গুদাম কমানো হলেও খরচের চাপ কমেনি।

অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, নিজস্ব গুদাম না থাকায় অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্তের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

বিএমটিএফের ওয়্যারহাউসে রাখা যন্ত্রের ভাড়া বাবদ ৬২ কোটি টাকার বেশি দাবি করা হলেও প্রকল্পের ডিপিপিতে এ খাতের উল্লেখ না থাকায় পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করেও বিষয়টির সমাধান হয়নি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় অর্থ নষ্ট হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ব্যর্থ প্রকল্পের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল সিদ্ধান্ত রোধে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তথ্য অনুযায়ী, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ৮৬ হাজার বিএমটিএফে, ৬২ হাজার মাঠপর্যায়ে এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ ইভিএম নির্বাচন ভবনে রয়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট যন্ত্রের মধ্যে ৪৫–৫০ হাজার ব্যবহারযোগ্য ছিল, ৬০–৭০ হাজার মেরামতযোগ্য এবং বাকিগুলো পুরোপুরি অকেজো।

২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন দিয়ে দেশে ইভিএমের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে ধীরে ধীরে এ প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হলেও স্থায়ী অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা ছাড়া বিপুলসংখ্যক যন্ত্র কেনা—শেষপর্যন্ত ব্যয়বহুল সংকটে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৬ জুন কয়েকটি পৌরসভা নির্বাচনে সর্বশেষ ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এর আগে মোট ১ হাজার ১৪৩টি নির্বাচনে ব্যবহার হয়েছিল ইভিএম।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন