Logo
Logo
×

জাতীয়

অবাধ ভূমি ব্যবহার বন্ধে ১৮ শ্রেণির জোনিং পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ এএম

অবাধ ভূমি ব্যবহার বন্ধে ১৮ শ্রেণির জোনিং পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে দ্রুত কমছে কৃষিজমি। খাদ্য নিরাপত্তা টিকিয়ে রাখা এবং ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার প্রণয়ন করেছে ‘ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন ও গেজেট প্রকাশের পরই এটি কার্যকর হবে।

খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এলোমেলো নগরায়ন, আবাসন প্রকল্প, শিল্পকারখানা, রাস্তা নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত ভূমির প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিজমি সংরক্ষণ এবং ভূমিরূপ অনুযায়ী জোনভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণই এই অধ্যাদেশের মূল লক্ষ্য। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ছাড়া এটি সারাদেশে প্রযোজ্য হবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকার দ্রুততম সময়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে ‘ভূমি ব্যবহার জোনিং ম্যাপ’ প্রণয়ন করবে। ভূমির বিদ্যমান ব্যবহার, প্রকৃতি ও সীমারেখা যাচাই করে মৌজা-ভিত্তিক এই ম্যাপ প্রস্তুত হবে এবং নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। জোনিং ম্যাপের সঙ্গে সব ধরনের স্থানিক পরিকল্পনার সামঞ্জস্যও নিশ্চিত করবে সরকার।

ভূমিকে মোট ১৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হবে—কৃষি অঞ্চল, বিশেষ কৃষি অঞ্চল, কৃষি–মৎস্য চাষ অঞ্চল, নদী-খাল, জলাশয়-জলাধার, পরিবহন অঞ্চল, শহর-আবাসিক অঞ্চল, গ্রামীণ বসতি, মিশ্র ব্যবহার, বাণিজ্যিক অঞ্চল, শিল্প এলাকা, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা, বন, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, সাংস্কৃতিক-ঐতিহ্য এলাকা, পাহাড়-টিলা, পতিত এবং অন্যান্য।

সর্বশেষ ভূমি জরিপের স্বত্বলিপি ও মাঠ পর্যায়ের যাচাইয়ের ভিত্তিতে নাল, বিলান, ধানি জমি, বোরো, চর ভূমি, বাগান, পান বরজ, হোগলবন, ঘাসবন, পতিত, নার্সারি, মাঠ, বাঁশঝাড়, গুচারণভূমি থেকে শুরু করে সমজাতীয় আবাদি জমি পর্যন্ত সবকিছুই কৃষিজমির আওতায় গণ্য হবে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের প্রভাব থাকলেও সব কৃষিজমিই এ অধ্যাদেশের আওতায় সুরক্ষিত থাকবে।

দুই, তিন বা ততোধিক ফসলি জমি কোনো অবস্থাতেই অকৃষি কাজে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ কৃষি অঞ্চল ঘোষণা করা হলে সেই এলাকার জমি কৃষি ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। জাতীয় স্বার্থে ব্যতিক্রম প্রয়োজন হলে ন্যূনতম ভূমি ব্যবহারের কঠোর শর্ত আরোপ করা হবে এবং মোট কৃষিজমির ১০ শতাংশের বেশি পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া যাবে না।

অধ্যাদেশে পাহাড়-টিলা কর্তন, জলাধার-জলাভূমি ভরাট, বন ধ্বংস এবং ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো আবাসন কোম্পানি বা ব্যক্তি এসব এলাকা ভরাট বা স্থাপনা নির্মাণ করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে এবং দোষী ব্যক্তিকে মাটি ও স্থাপনা অপসারণ করতে বাধ্য করা হবে।

জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে—জোনিং ম্যাপ থাকুক বা না থাকুক কৃষিজমির তালিকা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা; জলাধার, বন, পাহাড়-টিলা ও পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও সংরক্ষণ; গো-চারণভূমি সংরক্ষণ; ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়ার আগে মাটির উৎস যাচাই; অবৈধ মাটি উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

নিজস্ব কৃষিজমিতে বসতবাড়ি, উপাসনালয়, কবরস্থান, পারিবারিক পুকুর বা কুটির শিল্প স্থাপন করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। অনুমতি ছাড়া স্থাপনা নির্মাণ করলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা অপসারণের আদেশ দিতে পারবেন।

অধ্যাদেশের অপরাধ ও দণ্ড অধ্যায়ে কঠোর শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে—

  • অনুমোদন ছাড়া জোনিং শ্রেণি পরিবর্তনে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা
  • কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহার করলে ১ বছর কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা
  • কৃষিজমিতে আবাসন/রিসোর্ট/কারখানা নির্মাণে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৪ লাখ টাকা জরিমানা
  • বিশেষ কৃষি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত করলে ৩ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা
  • পাহাড়-টিলা, বন, জলাধার ধ্বংসে প্রচলিত আইনের শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ ও পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ জানিয়েছেন, কৃষিজমি দ্রুত কমে যাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কঠোর আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই। পাশাপাশি বন, পাহাড়, জলাশয় সুরক্ষায়ও এ অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেলেই অধ্যাদেশটি দ্রুত কার্যকর করা হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন