Logo
Logo
×

জাতীয়

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটল

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জারি করেছেন বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আদেশে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দলের দাবি ও আপত্তি সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। সরকারের নীতিতে ভারসাম্য রাখার ইঙ্গিতও স্পষ্ট।

আদেশ অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে—যা বিএনপির দাবিই ছিল। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে থাকা বিভিন্ন আপত্তি কার্যকর থাকবে না। এ অংশটি জামায়াত ও এনসিপির দাবিকে সমর্থন করে।

দুই দফা সংলাপের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদে মোট ৮৪টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে, যার মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাব ৪৮টি। ১৭ অক্টোবর বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা, গণভোটে আপত্তিহীনতা এবং আদেশ প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারির দাবিতে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি।

সংবিধানগত ক্ষমতা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে শুরু থেকেই আদেশ জারির বিরোধিতা করে বিএনপি। তাদের দাবি ছিল—রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গণভোট করতে হবে। বিপরীতে জামায়াত ও এনসিপি সরাসরি আদেশ জারির পক্ষে ছিল। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির নামে আদেশ জারি হলেও এনসিপি এতে নৈতিক প্রশ্ন তুলেছে।

বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচন দিনের গণভোট চাইলেও জামায়াত ও তার শরিকরা পৃথক সময়ে গণভোটের পক্ষে আন্দোলন করছিল। তবে ভোটের দিন গণভোটের সিদ্ধান্তে বিএনপি কৃতজ্ঞতা জানালেও জামায়াত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

সংলাপে আলোচিত ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে ঐকমত্য হয় এবং ১৮টিতে রয়ে যায় আপত্তি। কমিশন সুপারিশ করে—গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পেলে আপত্তিগুলো বাতিল হবে। বিএনপি এটিকে প্রতারণা বলে সমালোচনা করে; তবে জামায়াত ও এনসিপি সন্তোষ প্রকাশ করে। পরে সরকার কিছু সংশোধন এনে সাতটি প্রস্তাবে আপত্তির সুযোগ রাখেনি—উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা, ন্যায়পাল, পিএসসি, সিজিএ, দুদক নিয়োগ ইত্যাদি।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে বাছাই কমিটি গঠনের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও র‍্যাংকড চয়েজ ভোটিং নিয়ে বিএনপির আপত্তি আছে। ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে সেসব আপত্তি অকার্যকর হবে।

উচ্চকক্ষ নিয়ে বিএনপি নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে গঠনের প্রস্তাব দেয় এবং এর আইন সংশোধনের ক্ষমতা না দেওয়ার কথা বলে। অপরদিকে জামায়াত ও এনসিপি পিআর-ভিত্তিক ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের ধারায় একমত ছিল। আদেশে তাদের মতই কার্যকর হয়েছে।

বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবেও বিএনপি আইন প্রণয়নের পক্ষে অবস্থান নেয়; আর জামায়াত-এনসিপি সংবিধানে বিধান চায়। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ হলে বিএনপির আপত্তি বাতিল হবে।

পার্লামেন্টে দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হওয়া এবং ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও এই প্রস্তাবগুলো গণভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রাখার প্রস্তাব কমিশন দেয়। বিএনপি-জামায়াত মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা পুনঃস্থাপন চায়। বাম দলগুলো বিদ্যমান চার মূলনীতির সঙ্গে এই বিষয়গুলো রাখতে চায়। নির্বাচনী বিজয়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব বাস্তবায়ন হবে বলে আদেশে উল্লেখ আছে।

গণভোটের ফল অনুকূলে হলে আগামী সংসদের সদস্যদের নিয়ে ১৮০ কার্যদিবসে সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি পরিষদ গঠিত হবে। এরপর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে—যা জামায়াত ও এনসিপি সমর্থন করলেও বিএনপি বিরোধিতা করে।

শাহবাগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদের সার্বভৌমত্বে কোনো বাহ্যিক আইন বা আদেশের হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবেন না। অন্যদিকে মগবাজারে আট দলের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের কমিশনের আদেশ জারিতে ভূমিকার জন্য ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, আদেশের তিনটি মৌলিক দাবির সমাধান না হওয়ায় তারা সনদে স্বাক্ষর করেনি। তবে গেজেটে তাদের দুটি আপত্তি আংশিক মীমাংসিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারি করায় তারা নৈতিক প্রশ্ন তোলেন এবং জানান—জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত এখনও বিবেচনাধীন।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন