Logo
Logo
×

জাতীয়

নিরক্ষর ভোটারদের ঝুঁকি বাড়াবে নতুন গণভোট পদ্ধতি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৩ এএম

নিরক্ষর ভোটারদের ঝুঁকি বাড়াবে নতুন গণভোট পদ্ধতি

শেষ পর্যন্ত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নসংক্রান্ত গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে ঘোষিত গণভোটের প্রক্রিয়াকে জটিল, অবাস্তব এবং ভোটারের গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।

তাদের মতে, প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে বহু ভোটার—বিশেষত নিরক্ষর জনগোষ্ঠী—গোপনীয়ভাবে ভোট দিতে পারবেন না। কারণ চারটি ভিন্ন বিষয়ে ভোট দিতে গিয়ে তাদের অন্যের সহায়তা নিতে হবে, যা গোপন ব্যালটের নীতি ক্ষুণ্ন করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট হাতে থাকায় ভোটার কোন চিহ্নে ভোট দিচ্ছেন তা অন্য কেউ দেখে ফেলার সম্ভাবনাও থেকে যাবে।

বিশিষ্টজনেরা আরও বলছেন, গণভোটের চারটি প্রশ্নে একজন ভোটারের অভিন্ন উত্তর থাকবে—এই ধারণা বাস্তবতাবর্জিত। চারটি ভিন্ন বিষয়ে একত্রে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিতে বাধ্য করা হলে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। তাদের মতে, বিশ্বে কোথাও গণভোট এভাবে চারটি প্রশ্ন একত্রে বেঁধে নেওয়া হয় না।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এটি পুরোপুরি অবাস্তব একটি প্রস্তাব। বিসিএসের এমসিকিউ প্রশ্ন হলেও চলতে পারত—কিন্তু গণভোটে এমন পদ্ধতির নজির নেই।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত প্রক্রিয়া আসলে জুলাই সনদের সম্ভাবনাই নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন, চারটি বিষয়ের মধ্যে দু’টিতে বিএনপির আপত্তি রয়েছে; ফলে দলটি তাদের ভোটারদের ‘না’ ভোট দিতে বললে এর ফলাফল আগেভাগেই অনুমান করা যায়। তার ভাষায়, ‘এটি অবাস্তব একটি প্রক্রিয়া।’

মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, চারটি বিষয়ে একটিমাত্র প্রশ্নের মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট নেওয়া হলে নিরক্ষর ভোটারদের পড়তে না পারার কারণে সহায়তা নিতে হবে, যা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করবে। এতে জুলাই সনদের ভালো উদ্যোগগুলোও ভেস্তে যেতে পারে। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন, এবং ডেপুটি স্পিকারকে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ার মতো ইতিবাচক প্রস্তাবগুলো।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি একজন ভোটার কিছু বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ এবং কিছু বিষয়ে ‘না’ মনে করেন, তাহলে তিনি কোনটি বেছে নেবেন? এখানে তাকে এককভাবে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

শাহদীন মালিকও মনে করেন, প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে ভোটাররা এতগুলো জটিল বিষয় বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না; এতে ভোটার উপস্থিতিও কমে যেতে পারে। তার ধারণা, গণভোটে ১০ শতাংশ ভোটও নাও পড়তে পারে। অনেকেই খালি ব্যালট জমা দেবেন।

বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন—এই জটিল ও বাস্তবতাবর্জিত প্রক্রিয়া জুলাই সনদের ইতিবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নের পথেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন