নির্বাচনকে ঘিরে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রকে প্রাথমিকভাবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ৭ লাখের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের চূড়ান্ত সংখ্যা, প্রতিটি কেন্দ্রে কতজন নিরাপত্তা সদস্য থাকবেন এবং তারা কতদিন মাঠে থাকবেন— এসব বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। বিষয়গুলো কমিশনের সভায় অনুমোদনের পর নির্ধারণ করা হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা মোতায়েনের জন্য একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। সেখানে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’, ২০ হাজার ৪৩৭টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১৩ হাজার ৪০০টি ‘সাধারণ’ কেন্দ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাথমিক হিসাবে মোট দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বা অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
ইসি জানিয়েছে, এসব কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, থানার দূরত্ব, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বসবাস, সীমান্তবর্তী এলাকা এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল বিবেচনায়। এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ফাইনাল ম্যাপিং এখনো করা হয়নি। আমাদের হাতে সময় আছে, কমিশন সভায় বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
এর আগে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। এসব কেন্দ্রে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে— অর্থাৎ মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ।
গত ৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদার, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ ও বাহিনীর সমন্বিত দায়িত্ববণ্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে প্রায় ৮ লাখ নিরাপত্তা সদস্যের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে ৪৭ হাজার পুলিশ সরাসরি ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবেন। প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রায় ১৬ হাজার কেন্দ্র বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। এজন্য পুলিশের বডি ক্যামেরা ব্যবহার ও প্রতিটি কেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এছাড়া ১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন বাহিনীর সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৯০ হাজার সেনা, আড়াই হাজার নৌবাহিনী ও দেড় হাজার বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি করে সেনা থাকবে। নির্বাচনের সময় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে তিন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।



