৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক প্রপাগান্ডা: ঐকমত্য কমিশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে একটি মহল কর্তৃক ছড়ানো ৮৩ কোটি টাকার আপ্যায়ন ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা বলে জানিয়েছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কমিশনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা করছে। তারা কমিশনের কোনো বক্তব্য গ্রহণ করেনি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য যাচাইয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।
বিবৃতিতে কমিশন জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪–২৫ ও ২০২৫–২৬ অর্থবছরে কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত কমিশনের মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এর মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। এই ব্যয়ের বেশিরভাগ অংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং কমিশনের বিভিন্ন সভা-সম্মেলনে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে (২০ মার্চ–১৯ মে ২০২৫) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভায় ব্যয় হয় ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা— প্রতিদিনের গড় ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকারও কম। তৃতীয় পর্যায়ের ৭টি বৈঠকে ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।
এ ছাড়া কমিশনের ৫০টি অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০ টাকা। রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ১৩টি সভা ও সংবাদ সম্মেলনে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৩টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা, যেখানে বিশেষজ্ঞরা কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেননি।
গত নয় মাসে বিভিন্ন অতিথি, বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের আপ্যায়নে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা।
কমিশন বলেছে, এই বিশদ তথ্য থেকেই স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ মনগড়া। এটি একটি মিথ্যাচার এবং কমিশন ও তার কাজকে হেয় করার অপপ্রয়াস।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা নিয়মিতভাবে কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পেরেছেন, আর সহসভাপতি ও সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করেছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
কমিশন আশা প্রকাশ করে, যারা অসৎ উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন। একই সঙ্গে কমিশন বিশ্বাস করে, দায়িত্বশীল গণমাধ্যমগুলো সত্য তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।



