Logo
Logo
×

জাতীয়

গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি : শিরীন পারভিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০০ পিএম

গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি : শিরীন পারভিন

বিজয়ীদের ট্রফি দিচ্ছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছবি : সংগৃহীত

বিজয়ীদের ট্রফি দিচ্ছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ গৃহকর্মীদের মজুরি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলে জানিয়েছেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) এফডিসিতে গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের যৌথভাবে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন নেটস বাংলাদেশ ও এডুকেশন আউট লাউড।

সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

শিরীন পারভিন হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে গৃহকর্মীদের অধিকারের কথা বলা হয়নি, তবে বলা উচিত ছিল। তাদের বেতন কাঠামো নিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়নি। জীবনযাপনের ব্যয় বিবেচনা করে গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হওয়া উচিত। তাদের অধিকার রক্ষায় স্বতন্ত্র ন্যায়পাল নিয়োগ করা হলে জবাবদিহিতার চর্চা গড়ে উঠবে। গৃহকর্মীর মজুরি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি।

তিনি বলেন, আগামীতে যারা সরকার গঠন করবে তাদের কর্মপরিকল্পনায় ন্যায়পাল নিয়োগ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইনি কাঠামো তৈরি অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করি। অনেক ক্ষেত্রেই গৃহকর্মীদের ‘বুয়া’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়। এই ধরনের অমর্যাদামূলক ও আপত্তিকর শব্দ পরিহার করা উচিত। গৃহকর্মীদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, একটি স্বৈরাচার সমাজব্যবস্থার ভিতরে একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করা যায় না। বিগত সরকারের আমলে গৃহকর্মীদের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার কোনো কিছুই করেনি। গৃহকর্মীদের জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করলেও তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে গৃহকর্মীরা ব্রিটিশ দাসপ্রথার মতোই দাস-দাসী হিসেবেই রয়ে গেছে। ফলে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ও স্বীকৃতি থেকে এখনো বঞ্চিত।

তিনি বলেন, গৃহকর্মীরা পারিশ্রমিক, কর্মঘণ্টা, চিকিৎসা, ছুটি ও বিনোদনসহ কোনোটাই তারা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের মতো পাচ্ছেন না। সময়ের পরিক্রমায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ দেখে মনে হয় এটি সভ্য সমাজব্যবস্থার দাসপ্রথার নব্য সংস্করণ। আমরা গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শন করতে না পারলে রাষ্ট্র যতই গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুক না কেন আমরা এই রাষ্ট্রকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বলতে কষ্ট হবে।

একা সরকারের পক্ষে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, এনজিও এবং গণমাধ্যমসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতিত গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। এ কারণে আগামী নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সমাজের অনগ্রাসর জনগোষ্ঠী গৃহকর্মীদের বেতন-ভাতা, ছুটি এবং বোনাসসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে তাহলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ও সমর্থন বাড়বে

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ গৃহকর্মীর অধিকার সুরক্ষায় নিম্নের ১০ দফা সুপারিশ করেন-

১) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের অন্তভুর্ক্ত করায় তাদের বেতন, বোনাস, কর্মঘণ্টা, ছুটি দ্রুত শ্রম আইন অনুযায়ী বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২) নিয়োগদাতা ও গৃহকর্মীর মধ্যে কাজের ধরণ, সময়, বেতন, ছুটি ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক লিখিত চুক্তি থাকা বাধ্যতামূলক করা।

৩) গৃহকর্মীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার ও এনজিওগুলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সহজে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা।

৫) গৃহশ্রমিক নিবন্ধন ও তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা।

৬) গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে স্বাস্থ্যবিমা, দুর্ঘটনা বিমা ও প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করা।

৭) গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিক হতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যম, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো।

৮) আহত অথবা নিহত গৃহকর্মীর পরিবারের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।

৯) শিশু গৃহকর্মী নিয়োগ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

১০) নির্যাতিত, চাকরি হারানো গৃহকর্মীদের জন্য পুনর্বাসনকেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবাসহ আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ অয়োজনে “আইন করে নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই গৃহকর্মীর অধিকার সুরক্ষা করতে পারে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, ড. এস এম মোর্শেদ,  কবি জাহানারা পারভীন ও সাংবাদিক মো. আল-আমিন।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন