ব্যাংকের লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব, চলছে তদন্ত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪, ০৬:১১ পিএম
ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চকবাজার শাখা
ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ মে চট্টগ্রামের চকবাজার শাখায় এসব স্বর্ণালংকার গায়েবের ঘটনা ঘটলেও ১ জুন তা জানাজানি হয়। এই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারাই জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বর্ণালংকারের মালিক রোকেয়া বারী।
চট্টগ্রাম নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা রোকেয়া বারী ২৯ মে লকার খুলে দেখতে পান, সেখানে সংরক্ষিত ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। পরে তিনি চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার তথ্যানুযায়ী, চকবাজার শাখার ঘটনাটি চুরি, মিসিং বা অন্য কোনো ঘটনা কি না, তা তদন্ত চলছে। ব্যংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা রোববার (২ জুন) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। গায়েব হওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে রয়েছে- ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ), যার ওজন ৬০ ভরি। একাধিক গলার চেইন ও কানের দুল, যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল, যার ওজন ১১ ভরি।
অভিযোগকারী রোকেয়া আক্তার বলেন, আমি ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় গত ১৭ বছর ধরে লকার ব্যবহার এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ মে বেলা ১২টার দিকে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে আমার কিছু স্বর্ণালংকার আনতে যাই। লকারের দায়িত্বে থাকা অফিসারকে আমার লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি চাবি দিয়ে লকার কক্ষের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই অফিসার আমার বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পান। এমন ঘটনা দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। লকারে চুড়ি, জড়োয়া সেট, গলার সেট, গলার চেইন, আংটি, কানের দুলসহ ১৬১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। লকার খোলার পর দেখা যায়, সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১১ ভরি স্বর্ণ অবশিষ্ট রয়েছে। বাকি স্বর্ণালংকারগুলো নাই। গায়েব হয়ে যাওয়া এসব স্বর্ণালঙ্কারের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। পরে এই ঘটনায় স্থানীয় চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে থানা-পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।
তবে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে জানিয়ে রোকেয়া আক্তার বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তদন্তের জন্য এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী রোকেয়া বারীর ছেলে ডা. রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় ২০০৭ সাল থেকে আমার মা, তাঁর স্বর্ণালংকার রাখার জন্য লকার ব্যবহার করে আসছেন। গত বুধবার বেলা ১২টার দিকে ব্যাংকে গিয়ে লকার রুমের ইনচার্জকে লকার খোলার জন্য ডাকেন। যেহেতু লকারের মূল চাবি মায়ের কাছে থাকলেও আরেকটি ডুপ্লিকেট চাবি থাকে ইনচার্জের কাছে। তারা দুইজন একই সঙ্গে লকার রুমে প্রবেশ করেন। তখন ইনচার্জ প্রথমে দেখেন যে মায়ের লকারটি খোলা। পরে আমার মা লকারে রক্ষিত স্বর্ণালংকার গুণে দেখে গায়েব হওয়ার বিষয়টি ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানান।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার ম্যানেজার শফিকুল মওলা লকার থেকে স্বর্ণালংকার গায়েব হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উর্ধতন কর্মকর্তারাসহ তদন্ত চলছে।
চকবাজার থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটিতে গিয়ে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি। প্রাথমিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। দেখেছি লকার রুমে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। ভিকটিম ও তার ছেলে থানায় এসেছিলেন জিডি করতে। কিন্তু আমরা ঘটনাটির অধিক গুরুত্ব বিবেচনায় ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে বলেছি।