জাহাজ নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা হবে : শিল্প উপদেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে কেন্দ্র করে আবারো আলোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের জন্য নির্মিত অত্যাধুনিক বহুমুখী জাহাজ ‘ওয়েস ওয়্যার’ হস্তান্তরের অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ঘোষণা দেন-জাহাজ নির্মাণ আইন যুগোপযোগী করা হবে।
তার মতে, পোশাক খাতের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠতে পারে জাহাজ শিল্প। তবে এজন্য শিল্পে বৈচিত্র্য আনা ও টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য।
বাংলাদেশকে একসময় ‘নিম্ন আয়ের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি’ বলা হলেও, বর্তমানে শিল্প খাতই দেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। সেই শিল্পের একটি উদীয়মান খাত হলো জাহাজ নির্মাণ।
আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছে ৩৫০টিরও বেশি জাহাজ সরবরাহ করেছে।
২০০৮ সালে ডেনমার্কে কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রফতানি করে বাংলাদেশ প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ রফতানিকারক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তারপর থেকে জার্মানি, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, মোজাম্বিকসহ নানা দেশে জাহাজ রফতানি হয়েছে।
‘ওয়েস ওয়্যার’ : বাংলাদেশে তৈরি নতুন সম্ভাবনার প্রতীক ।
তুরস্কের নোপ্যাক শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেডের জন্য নির্মিত জাহাজ ‘ওয়েস ওয়্যার’ বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বড় উদাহরণ।
দৈর্ঘ্য: ৩৪১ ফুট, প্রস্থ: ৫৫ ফুট,গভীরতা: ২৫ ফুট,ইঞ্জিন: ২,৭৩৫ হর্সপাওয়ার,গতি: প্রতি ঘণ্টায় ১২ নট,বহন ক্ষমতা: ৫,৫০০ টন ।
এটি ইস্পাত, সার, খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক পদার্থ পর্যন্ত বহুমুখী পণ্য পরিবহনে সক্ষম।
অর্থনীতিবিদদের মতে, জাহাজ নির্মাণ খাতকে শক্তিশালী করা গেলে বাংলাদেশ কয়েকভাবে লাভবান হবে—রফতানি আয় বৃদ্ধি – গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রফতানি করে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা।
ব্লু-ইকোনমি শক্তিশালীকরণ – সমুদ্র থেকে শৈবাল, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য কাঁচামাল আহরণ করে ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা যাবে। এতে কাঁচামাল আমদানি কমবে।
চাকরির সুযোগ – স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি – আন্তর্জাতিক মানের শিপইয়ার্ডে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন বাজার ধরার সুযোগ তৈরি হবে।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে তবে সব অর্জনের মাঝেও খাতটি নানা সমস্যায় জর্জরিত—
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সংকট
দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি
আধুনিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি
আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল বারী মনে করেন, সরকার দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা দিলে এবং জাহাজ শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী নীতি নির্ধারণ করলে এই খাত দেশের উন্নয়নে পোশাক শিল্পের মতো বড় অবদান রাখতে পারবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত জাহাজ নির্মাণ আইন ও নীতিমালার বেশিরভাগই পুরনো। বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হলে—
কর ছাড় ও প্রণোদনা
সহজ ঋণ সুবিধা
নিরাপত্তা মানদণ্ডে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা
এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে আইন যুগোপযোগী করা জরুরি। না হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারে টিকতে পারবেন না।
বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প এখনো নবীন পর্যায়ে থাকলেও ইতিমধ্যে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। আনন্দ শিপইয়ার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার প্রমাণ করছে—বাংলাদেশ চাইলে কেবল পোশাক নয়, জাহাজ শিল্পেও শীর্ষ রফতানিকারক হতে পারে।
শিল্প উপদেষ্টার ঘোষণার পর এখন সবার নজর সরকারের ওপর। আইন যদি সত্যিই যুগোপযোগী হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন নিশ্চিত হয়, তবে জাহাজ শিল্প হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরবর্তী সাফল্যের গল্প।



