গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নে দিল্লিতে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ-ভারত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ এএম
১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। চুক্তি নবায়নে উভয়পক্ষ সম্মত এবং সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার প্রতিনিধি দল দিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে যোগ দেবে।
যৌথ নদী কমিশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার পক্ষ থেকে সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কারিগরি দল নয়াদিল্লি সফর করবে। বৈঠকের মূল এজেন্ডা হবে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে অচলাবস্থা তৈরি হলেও পানি ইস্যুতে নিয়মিত আলোচনা চলছে। চলতি বছরের মার্চে দিল্লিতে জেআরসি বৈঠক হয়। সাধারণত প্রতিবছর দুইবার করে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী থাকলেও এখন পর্যন্ত শুধু গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়েই আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। তিস্তা চুক্তি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে ঝুলে আছে।
১৯৯৬ সালের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবগৌড়া ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছর দুই দেশ ঘোষণা দিয়েছিল, নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে কারিগরি আলোচনা চালু হয়েছে। তবে ভারতের সংসদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং গত ১ আগস্ট জানিয়েছেন, এখনো আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হয়নি। পশ্চিমবঙ্গসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবহারের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মার্চের বৈঠকে কিছু ইস্যুতে মতৈক্য না হওয়ায় মিনিটসে সই হয়নি। এটি অস্বাভাবিক নয়, অতীতেও এমন হয়েছে। পরে কূটনৈতিকভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে মিনিটস স্বাক্ষর করা হয়ে থাকে।
যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, এটি রুটিন বৈঠক। গঙ্গা চুক্তির বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না—সেটিই মূলত আলোচনার বিষয়। অন্য কোনো এজেন্ডা থাকে না।
গত মার্চে ফারাক্কায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ গঙ্গার পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ভারতকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায়। কারিগরি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভাগাভাগি গাইডলাইন অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে, তবে প্রবাহ হ্রাসের বিষয়টি বড় উদ্বেগের জায়গা।
নিয়ম অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতিদিন চারবার পানি মাপা হয় এবং চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ পানি ভাগ করে নেয়। উভয় পক্ষের দল এ প্রক্রিয়া তদারকি করে।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দেড় বছর বাকি থাকায় নবায়ন ইস্যুটি দুই দেশের সম্পর্কের অন্যতম আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।



