রাজস্ব প্রশাসনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৭ এএম
ছবি : সংগৃহীত
সরকারের রাজস্ব প্রশাসনে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসনিক বাস্তবায়নকে পৃথক ধারায় পরিচালনার লক্ষ্যে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে পাঁচ দফা মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিমার্জিত ধারাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রিসভা উপকমিটির অনুমোদন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত গ্রহণের পর অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
অধ্যাদেশে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একটি মন্ত্রণালয়কে একাধিক বিভাগে ভাগ করতে পারবেন।
- প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে, যা নীতির কার্যকারিতা ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে।
- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (অর্থ: শুল্ক ও আবগারি) বিধিমালা, ১৯৮০ অনুসারে নতুন বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন করা হবে।
- সরকারি সম্পদের ব্যবহারে নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা হবে।
- নতুন কাঠামোয় অর্থ ক্যাডার থেকে দুইজন সচিব নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১২ মে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সরকারের মতে, রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথক করার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থ সংঘাত হ্রাস এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ সম্ভব হবে। গত ৫০ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। সরকার এ অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
বর্তমান কাঠামোয় নীতি ও বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকায় স্বার্থ সংঘাত, জবাবদিহির অভাব এবং কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী মহল দীর্ঘদিন ধরে পৃথক নীতি বিভাগ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে, যা বাস্তবায়িত হলে করজাল সম্প্রসারণ, জবাবদিহি এবং দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারি সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন কাঠামো কার্যকর হলে সরকারি সম্পদের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়বে, অপচয় কমবে এবং আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত হবে।



