দুবাই গিয়ে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার করে আনলো পিবিআই
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
ছবি : দুবাই গিয়ে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার করে আনলো পিবিআই
নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ হারুনুর রশিদ খান হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত আসামীকে ইন্টারপোলের রেড এলার্টের ভিত্তিতে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে এবং দুবাই পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীকে দুবাই হতে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য বার্তা প্রেরণ করে। বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম দুবাই গিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসে এবং পিবিআই নরসিংদী জেলা উক্ত আসামীকে আদালতে সোপর্দ করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মহসীন মিয়া। গত ২০/০৭/২০২৫ খ্রি. দুপুর ১২.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত আসামীকে পিবিআই নরসিংদী জেলায় হাজির করা হয়।
ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ হারুনুর রশিদ খান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। ভিকটিম প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ার পর তার বাসভবনে প্রায় সময়ই এলাকার লোকজনদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। আসামীরা ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পণা করে এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১নং আসামী আরিফ সরকার গত-২৪/০২/২০২৩ খ্রিঃ ২০:৪৩ ঘটিকায় একটি বিদেশী নাম্বার দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করে বলে, “আমি বিদেশে চলে এসেছি এবং আগামীকাল মহসীন মিয়া আপনার নিকট মসজিদের অনুদানের জন্য কিছু টাকা নিয়ে আসবে।” ভিকটিম জানায় সকালে আসতে বলো। ঘটনার দিন গত-২৫/০২/২০২৩ খ্রিঃ সকাল ০৬:১৩ ঘটিকার সময় এজাহারনামীয় ২নং আসামী মহসীন মিয়া একটি মোটর সাইকেল যোগে দুটি পিণ্ডলসহ দুইজন শুটারম্যান নিয়ে ভিকটিমের বাসভবনের নিচে গিয়ে তাকে ফোন করে বলে, “আরিফ আমাকে মসজিদের অনুদানের জন্য কিছু টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে এবং আমি আপনার বাসার নিচে আছি।” ভিকটিম ২নং আসামী মহসিন মিয়াকে তার বাসভবনের ৩য় তলার ড্রয়িং রুমে এসে বসতে বলেন এবং ড্রয়িং রুমের দরজা খুলে দেন। ২নং আসামী মহসিন মিয়া দুইজন শুটারম্যান ও দুটি পিস্তল নিয়ে ভিকটিমের বাসভবনে প্রবেশ করে। ভিকটিম ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আসামীদের সাথে কুশল বিনিময় করে এবং বলেন, “তোমরা বস, আমি তোমাদের জন্য একটু ফল কেটে নিয়ে আসি।” সোফা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই দুইজন শুটারম্যান ভিকটিমের কোমড়ে দুই রাউন্ড গুলি করে আসামীগণ তার ৩য় তলা থেকে দৌঁড়ে নেমে মোটর সাইকেল দিয়ে পালিয়ে যায়। অপর আসামী হুমায়ুন একটি প্রাইভেটকার নিয়ে অবস্থান করে। আসামীগন ঐ প্রাইভেটকার দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাহিরে চলে যায়। ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তার শরীর হতে দুটি বুলেট বের করা হয়। তাকে দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা করানো হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত-৩১/০৫/২০২৩ খ্রিঃ মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় গত-২৭/০২/২০২৩ খ্রিঃ ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানার মামলা নং-১৭, তারিখ-২৭/০২/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩২৬/৩০৭/১১৪/১০৯/ ৩৪/সংযুক্ত ৩০২ পেনাল কোড দায়ের করেন। শিবপুর থানা পুলিশ আসামীদের বহনকারী ড্রাইভার নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে এবং আসামী ড্রাইভার নূর মোহাম্মদ বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার কয়েকদিন পর গত-০৭/০৩/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে এবং আসামী ১। মোঃ ফরহাদ হোসেন মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আসামী ২। মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ (২৮) দ্বয়কে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানার মামলা নং-১৩ (০৩)২৩ মামলায় বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন।
শিবপুর থানা পুলিশ আসামীদ্বয়কে নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গত-১৬/০৩/২০২৩ খ্রিঃ নরসিংদী কোর্টে উপস্থাপন করা হয়। গত-১৮/০৩/২০২৩ খ্রিঃ ও গত ২৬/০৩/২০২৩ খ্রিঃ শিবপুর থানা পুলিশ আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত রিমান্ডের আবেদন না-মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের ছেলে বাদী আমানুর রশিদ খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে গত-২৩/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ পিবিআই নরসিংদী জেলা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এবং এসআই (নিরস্ত্র) মন্তোষ চন্দ্র দাস মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আজিপি জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল এর তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই নরসিংদী জেলার সাবেক ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব এনায়েত হোসেন মান্নান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মন্তোষ চন্দ্র দাস আসামী জহিরুল ইসলাম শরীফ মোল্লাকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। আসামী জহিরুল বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে আসামী জহিরুল জানায় যে, আসামীদের সাথে তার হোয়াটস এ্যাপে কথা হয়েছে। আসামী আরিফ সরকার এর পরিকল্পনায় আসামী মহসীন মিয়া, আসামী ইরান মোল্লা ও আসামী মোবারক ভিকটিমকে তার বাসভবনে গুলি করে এবং আসামী হুমায়ুন একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে তাদেরকে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌছে দেয় এবং আসামীরা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করতেছে।
পিবিআই নরসিংদী জেলা আসামীদের বিদেশে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য The Assistant Inspector General (NCB), Bangladesh Police, Police Headquarter, Dhaka বরাবরে আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে ইন্টারপোল আসামীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে United Arab Emirates, Ministry of interior, Directorate General for federal Criminal Police, NCB Abu Dhabi-UAE পিবিআই নরসিংদী জেলায় পত্র প্রেরণের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন যে, এজাহারনামীয় আসামী আরিফ সরকার, মহসীন মিয়া ও হুমায়ুন বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) তে অবস্থান করিতেছে।
পলাতক আসামী আরিফ সরকার, মহসীন মিয়া ও হুমায়ুন এর বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পিবিআই নরসিংদী জেলা বিজ্ঞ আদালত আবেদনপূর্বক আসামী আরিফ সরকার ও আসামী মহসীন মিয়ার বিচারের নিমিত্তে বিদেশ হতে দেশে ফেরত আনার জন্য গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। দেশের পটপরিবর্তনের পর আসামী মোবারক হোসেন শুটার মোবারক দেশে চলে আসে। পিবিআই নরসিংদী জেলা আসামী মোবারক হোসেন শুটার মোবারককে গত-০৯/০৩/২০২৫ খ্রিঃ ঢাকা মহানগর এলাকা হতে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। মামলার এজাহারনামীয় আসামী আরিফ সরকার ও আসামী মহসীন মিয়াকে বিদেশ হতে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য The Assistant Inspector General (NCB), Bangladesh Police, Police Headquarter, Dhaka বরাবর রেড নোটিশ জারির আবেদন করে। আবেদন মঞ্জুর হলে উক্ত রেড নোটিশের কপি The Assistant Inspector General (NCB), Bangladesh Police, Police Headquarter, Dhaka এর মাধ্যমে দুবাইতে প্রেরণ করা হয়। দুবাই পুলিশ রেড নোটিশের কপির ভিত্তিতে আসামী মহসীন মিয়াকে গত-২১/০৫/২০২৫ খ্রিঃ গ্রেফতার করে The Assistant Inspector General (NCB), Bangladesh Police, Police Headquarter, Dhaka কে অবগত করে। গত-১৫/০৭/২০২৫ খ্রিঃ বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম আসামী মহসীন মিয়াকে দোবাই হতে আনার জন্য রওনা দেয় এবং গত ২০/০৭/২০২৫ খ্রিঃ ১২:৩০ ঘটিকায় উক্ত টিম আসামী মহসীন মিয়াকে দোবাই হতে বাংলাদেশের পিবিআই নরসিংদী অফিসে ফেরত নিয়ে আসে। আসামী মহসীন মিয়াকে গত-২১/০৭/২০২৫খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিবিআই নরসিংদী জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) এস.এম. মোস্তাইন হোসেন বিপিএম (বার) বলেন,“আমরা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আসামী মহসীন মিয়ার বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত হই এবং তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির ব্যবস্থা করি। দুবাই পুলিশ রেড নোটিশের কপির ভিত্তিতে আসামী মহসীন মিয়াকে গ্রেফতার করে আমাদের অবগত করলে বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম দুবাই গিয়ে আসামী মহসীন মিয়াকে বাংলাদেশে ফেরতে আনতে সক্ষম হয়। আসামী মহসীন মিয়াকে গত-২১/০৭/২০২৫খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে আসামী হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে এবং উক্ত আসামী নিজেকে জড়িয়ে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পিবিআই ন্যায় বিচার প্রতিষ্টায় সর্বদা স্বচেষ্ট।



