ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৭ জন। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু, যাঁরা কোচিং ক্লাসে অংশ নিতে কলেজ ভবনে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭১ জন, যাঁদের বেশিরভাগই আগুনে দগ্ধ হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করা বিমানটি মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় মাইলস্টোন কলেজের ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন। কেউ ক্লাসে ছিলেন, কেউবা ছুটি শেষে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে নামে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট, বিজিবির দুই প্লাটুন সদস্য, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও স্কাউট সদস্যরা। চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে; স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ছুটে যান অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, নিহতদের মধ্যে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক — পাইলট তৌকির ইসলাম এবং শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। এই সময় পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৮ জন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন আইসিইউতে, দুইজন ভেন্টিলেশনে আছেন এবং তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে নাজিয়া (৯০ শতাংশ দগ্ধ), আরিসন (১০০ শতাংশ), আরিয়ান (৮৫ শতাংশ), শায়ান ইউসুফ (৯৫ শতাংশ) এবং ৯ বছর বয়সী বাপ্পি (৩৫ শতাংশ)। ৬ জনের মরদেহ এখনো শনাক্ত হয়নি, একজনের দেহাবশেষ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী প্রযুক্তিগত সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছেন। আহতদের ‘কেইস সামারি’ পাঠানো হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয়।
সরকার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করে আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাজনৈতিক দল এবং নানা সংগঠনের নেতারাও ঘটনায় শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।



