Logo
Logo
×

আইন-আদালত

সাংবাদিক নির্যাতনে সাবেক ডিসি সুলতানাকে জেল হাজতে প্রেরণ

Icon

রাজু মোস্তাফিজ,কুড়িগ্রাম

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

সাংবাদিক নির্যাতনে সাবেক ডিসি সুলতানাকে জেল হাজতে প্রেরণ

ছবি-যুগের চিন্তা

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমান আদলতের নামে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মোসাম্মৎ ইসমত আরা এই আদেশ দেন।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সুত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১ টার দিকে আদালতে এজলাস হাজির হন সুলতানা পারভীন। এ সময় তাকে দেখার জন্য অনেক উৎসুক জনতা ভিঢ় করে। আসামি পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী। সাংবাদিক আরিফের পক্ষে এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলুসহ জেলা বারের কয়েকজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

আদালত প্রথম দফায় প্রায় সোয়া ১ ঘন্টা উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক শোনেন। পরে মুলতবি দিয়ে আবার দুপুর আড়াইটায় শুনানি শুরু হয়। উভয় পক্ষের শুনানি ও এজাহার পর্যালোচনা করে আদালত আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদেশের কিছু পরেই প্রিজন ভ্যানে করে সুলতানা পারভীনকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ৩ আগস্ট আসামি সুলতানা পারভীন হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

এর আগে কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার বসতবাড়িবসতঘরের গেইট ভেঙ্গে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমান আদালতের নামে এক বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সারাদেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেয় জেলা প্রশাসন।

জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরপর জামিন নিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুলতানা পারভীন। অপর আসামিরা এখনও আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি।

সাংবাদিক আরিফ বলেন, ‘ সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে বিনা অপরাধে মধ্যরাতে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়। ন্যায় বিচার পাবার আশায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রতীক্ষা করছি। আজ প্রাথমিকভাবে আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পেয়েছি।’

আরিফের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে আনিত সাংবাদিক আরিফের করা মামলায় সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুরের আদেশে বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমরা সন্তুষ্ট। আদেশটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।’

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন