প্লট বরাদ্দ : শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম
ছবি - সংগৃহীত
প্লট বরাদ্দে অনিয়মের পৃথক পাঁচ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ২৩ জনকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলার আজ তারিখ ধার্য ছিল। এক মামলায় গত ১৭ জুন গেজেট প্রকাশের নির্দেশ হয়। তবে গেজেট প্রকাশিত হয়নি। অন্য পাঁচ মামলার ২৩ আসামি পলাতক মর্মে প্রতিবেদন এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের আবেদন করি। আদালত বিজি প্রেসের মাধ্যমে আসামিদের আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। ছয় মামলারই পরবর্তী তারিখ ২০ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।
আরও যাদের বিরুদ্ধে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
গত ১০ এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং শরীফ আহমেদ।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটি গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন।
মামলাটি তদন্ত করে গত ১০ মার্চ তদন্ত প্রাপ্তে আরও দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা, পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন আফনান জান্নাত কেয়া।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে ৩০ কাঠা প্লট গ্রহণের পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিকসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে গত ১৩ এপ্রিল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।তিন মামলার মধ্যে একটিতে শেখ রেহানাকে, অন্যটিতে তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও অন্য মামলায় মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করা হয়। তিন মামলায় মোট আসামি ৫৩ জন। যেখানে একেকজন একাধিক মামলার আসামি। সে হিসেবে তিন মামলায় মোট ২২ জন আসামির নাম রয়েছে।
এক মামলার আসামি হলেন- শেখ রেহেনা, শেখ হাসিনা, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
আরেক মামলার আসামিরা হলেন- শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার ও অতিরিক্ত সচিব অলিউল।



