কালেরসাক্ষী মনমুগ্ধকর মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
মঞ্জুরুল কবির বাবু,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি সারাদেশে ভ্রমন প্রিয় ও ইতিহাসবিদদের কাছে এক দারুন আকর্ষণ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এর গোড়পত্তন করেন বাবু রাম রতন ব্যানার্জি। বলা যায় মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িকে ঘিরেই গড়ে ওঠে রূপগঞ্জের ইতিহাস।
শীতলক্ষা নদীর তীর ঘেষে নিরব সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় ৫২ বিঘা জমির উপর প্রকাণ্ড এই জমিদার বাড়ি অবস্থিত। ১৯৮৯ সালে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জি প্রত্যেক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এই প্রাসাদের পিছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।
প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জির পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জি ১৯৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও শেখানের দুইটি পুকুর খন্ডন করার পর হৃদরোগে মারা যান। কি নিয়েছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গেজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জি ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জি ১৯০৯ সালের প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন। জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম এ অঞ্চলে খ্যাতি ছিল। কারণ তিনি দুবার দিল্লির কাউন্সিলর অব স্টেটের পূর্ববঙ্গ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জমিদার জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জি প্রজা সাধারণের কল্যাণ সাধনের জন্য স্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পুকুর। একপর্যায়ে প্রজাদের উপর শুরু হয় অত্যাচার আর ক্ষমতার অপব্যবহার। সুন্দরী মেয়ে, ঘরের বধূ এদের উপর বৃষ্টি পড়লে রেহাই পেত না কেউ। জমিদার প্রথার শেষ দিকে নানাভাবে বিদ্রোহের পটভূমি তারই অংশ।
১৯৪৭ সালের তৎকালীন জমিদার জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জি পালিয়ে সপরিবারে কলকাতা চলে যান। ফলে জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী রাজবাড়ীটি শূন্য হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে। পরে ১৯৬৬ সালে এখানে হাই স্কুল ও কলেজ স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে মোট ৯৫টি কক্ষ। বিশাল আকৃতির প্রধান ফটক পেরিয়ে ঢুকতে হয় ভিতরে। অন্দরমহলে রয়েছে আরো দুইটি ফটক। সর্বশেষ ফটো পেরিয়ে মেয়েদের স্নানের জন্য ছিল শানবাঁধানো পুকুর। এখানে প্রবেশে বাইরের লোকদের জন্য ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১৯৪৭ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি সহ পরিবারের কলকাতা চলে যাওয়ার ৬৯ বছর পর সন্ধান পাওয়া যায় তার বংশধরের।
দেশ বরেণ্য কলামিস্ট লায়ন মির আব্দুল আলীম সাহেবের আমন্ত্রণে ১৯ নবেম্বর ২০১৬ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাতনির আগমন ঘটে ররূপগঞ্জে। মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির রাজকন্যা সঙ্গীতা ব্যানার্জি তার বাপ দাদার পৈত্রিক জমিদার বাড়ি ঘুরে বেড়ান। বিধায় মূহুর্তে সঙ্গীতা ব্যানার্জি আবেগ আর আনন্দময় কান্নায় বলে ওঠেন। আজ আমি আমাদের যে বাড়িটি দেখলাম এই বাড়ির গল্প দাদুর কাছে শুনেছি।



