সময় কত গতিশীল, দেখতে দেখতে অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে তিন দশক। একদিন শখের বশেই দেশীয় আত্মপরিচয়ের মূল্যবোধ থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় ১৯৯৪ সালে ১০০ স্কয়ার ফুটের একটা দোকান নিয়ে। রাতারাতি সাফল্য যে আসে তা কিন্তু নয়। কিন্তু ক্রমেই নামটা ছড়িয়ে যায় মানুষের মুখে মুখে। ওই সময়ের চারুকলার শিক্ষক মরণ চাঁদ পালের কাছ থেকে তার তৈরি সিরামিকসের সামগ্রী নিয়ে এসে বিক্রি হলে তার দাম দিয়ে আবার নতুন সামগ্রী কিনে আনা হত। এভাবেই চলতে থাকে এই সিরামিকসের আর্ট পিসগুলো সঙ্গে বিয়ে বাড়ির স্টেজ ও আল্পনার কাজ। ক্রমেই বাড়ে এর চাহিদা। তখনও দোকানে কাপড়ের প্রবেশ ঘটেনি। সেটা আসতে সময় নেয় আরও কিছু দিন। ১৯৯৫ সালে শাড়ি স্থান পায় সিরামিকসের আর্ট পিস গুলোর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান পণ্যের তালিকায়।
এদেশের অন্যতম ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘বিশ্বরঙ’ ১৯৯৪ সাল থেকে ভিন্নধর্মী কাজের জন্যই ফ্যাশন সচেতনদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত। বিগত সময়ে বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতে ফ্যাশন সচেতনদের জন্য অন্তঃপ্রান প্রচেষ্টার ফসল আমাদের নিরীক্ষামূলক কাজগুলো। এ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য - শখের হাড়ি, মুখোশ, নকঁশী পাখা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলার পটচিত্র, বাংলা পঞ্জিকা, ঐতিহ্যে বাংলা সিনেমা, পানাম নগর, কান্তজী মন্দিরের টেরাকোটা, রিক্সা মোটিফসহ আল্পনার মত মহামূল্যবান মোটিফকে পোশাকের অলংকরণ হিসেবে ব্যাবহার করে দেশীয় ফ্যাশনকে ইতিহাস ঐতিহ্যের মিশেলে নিয়ে যেতে চেয়েছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমৃদ্ধির শিখড়ে।
গত ২০ ডিসেম্বর এক জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দেশের গুণী মানুষদের উপস্থিতি তে পালিত হলো বিশ্বরঙ এর ৩০তম জন্মদিন। এই আড়ম্বরতায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের স্বনামখ্য একুশে পদ প্রাপ্ত অভিনেতা লেখক ও পরিচালক আবুল হায়াত এবং ওনার সহধর্মীনী শিরিন হায়াত, জনপ্রিয় মডেল নৃত্য শিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ, অভিনেত্রী বিজয়ী বরকতউল্লাহ, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া, অভিনেত্রী হিমি, ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল (ডিন চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকা তথা জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সরব ও সতস্ফূর্ত উপস্থিতি।
বিশ্বরঙের সৃষ্টিশীলতা সবসময়ই সুস্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র। আমরা আমাদের স্থানীয় কারিগর, তাঁতি, সূচিশিল্পী, কারুশিল্পীদের সাথে কাজ করি এবং বিস্ময়কর ভাবে প্রাণবন্ত সংগ্রহের পরিসীমা অতিক্রম করি ফ্যাশন প্রেমীদের অভিন্ন নিরবিচ্ছন্ন চাহিদাকে। আমাদের নকশাগুলো আমাদের লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত যা ঐতিহাসিকভাবে দক্ষতার উৎস হিসাবে একটি নির্ধারিত ভূমিকা পালন করে আসছে সুদীর্ঘ ৩০ বছর ধরে। সর্বপরি এদেশের সাধারণ মানুষরাই আমাদের সৃষ্টির এক মহান অনুপ্রেরণা। এই সুদীর্ঘ সময়ের পথচলায় বিশ্বরঙের পাশে ছিলেন সাংবাদিক বন্ধুরা, বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীরা, মিডিয়া তারকারা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেলসহ নানা শ্রেণির সাধারণ শুভানুধ্যায়ীরা। তাদের প্রতি অকৃত্রিম অশেষ কৃতজ্ঞতা। ‘বিশ্বরঙ’ পরিবার সবসময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে শুভানুধ্যায়ীদের। শুভেচ্ছা সবসময়ের।