ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় নিজের সাথেই নিজের লড়াই করতে হবে: রাবি উপাচার্য
রাবি প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আদিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ শরীফ ওসমান হাদির স্মরণে বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণের লড়াইয়ে পথপ্রদর্শক এক শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাবি কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
রাবি উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, '৩২ বছর বয়সে হাদি যে পরিমাণ ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে গেছে জাতির থেকে। এই দেশের ১০০ বছরের কোনো নেতারও সেই অর্জন নেয়। হাদি এটা করতে পেরেছে কারণ সে মানুষের মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কথা বলেছিল ও কাজ করার চেষ্টা করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ইনসাফ এত সহজ নয়। লাঠি দল বল নিয়ে চলাফেরা করার মধ্যে হিম্মত নায়। বরং যে মানুষটা আজ কোণঠাসা তাকে রক্ষা করায় হলো প্রকৃত হিম্মত। এত সহজ নয় সব কিছু। এতদিন তো গর্তের ভিতরেই ছিলে। আমরা ১৫/২০ বছর লড়াই করেছি, আমরা লড়াইয়ের অর্থ বুঝি। কিন্তু আল্লাহ রহমত না করলে এখনো তোমরা গর্তের ভিতরেই থাকতে।
দেশ গঠন করতে গিয়ে শুধু হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানো মানুষগুলো হাদির সম্পর্কে কথা বলার আগে ভাববে। বিচারের কাজের একটা দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। রাতারাতি সমাধান করতে গিয়ে আমরা আরো বেশি সংকট নিয়ে আসছি কিনা সেটা ও ভেবে দেখবা।
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অবশ্যই তোমাকে শত্রুর নাগরিক অধিকার ও আদায় করতে হবে। এবং তুমি শুধু আশঙ্কা থেকে কোনো ভিত্তি মতাদর্শের মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। তারজন্য তোমার প্রয়োজন প্রমাণ।
আলাপ যদি করতে হয় সবচেয়ে কঠিন আলাপ করো। একটা তলা দেওয়াই হলো সব থেকে সহজ আলাপ। তোমার বরং আলাপ করা উচিত ছিল আমরা কেন একসঙ্গে কাজ করতে পারছি না?কেন এমন হচ্ছে?
তোমাকে এমন কঠিন আলাপই করতে হবে। তাহলেই তুমি বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়তা কমতে পারবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম বলেন, 'মানুষের দক্ষতা যোগ্যতা এবং জ্ঞানের বিস্তৃতি জীবিত অবস্থায় যতটা না বুঝতে পারি তার মৃত্যুর পর আরো বেশি বোঝা যায় যদি হাদির মতো মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেকেই হাদিকে চিনতাম না তার মৃত্যুর পরে তার সম্পর্কে তথ্যগুলো আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, 'আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার জীবন দর্শন আমাদের সবার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। জুলাই যোদ্ধাদের অন্যতম ওসমান হাদী কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতিতে তার ভূমিকাটা অন্য জুলাই যোদ্ধাদের সাথে যায় না। ইনকিলাব মঞ্চ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
রাবি শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির সভাপতি এবং রাকসুর (ভিপি) সহ-সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, 'শহীদ শরীফ ওসমান হাদী ভাই যে বিপ্লবী চেতনা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তা তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে শেষ হয়নি। বরং তাঁর শাহাদাতের পর কফিন ধরে এবং দাফনের পর অসংখ্য মানুষ শপথ নিয়েছে সেই পথেই এগিয়ে যাওয়ার। সারা দেশের মানুষ জানাজা ও গায়েবানা জানাজায় অংশ নিয়ে হাদীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
তিনিও আরও বলেন, 'ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রামের কথা হাদী বলেছিলেন, সেই লড়াই অব্যাহত থাকবে যত নির্যাতন, গুলি বা শাহাদাতই আসুক না কেন, হাদীর মতো হাজারো মানুষ তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী চেতনা ধারণ করেই হাদী একটি নিজস্ব সাংস্কৃতিক বিপ্লব গড়তে চেয়েছিলেন। নজরুল যেমন চোখে চোখ রেখে শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, আমরাও তেমনি ভয় দেখিয়ে শাসন কায়েমের চেষ্টা, ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াব।



