আওয়ামীপন্থি ডিনদের পদত্যাগে রাকসুর জিএস আম্মারের আল্টিমেটাম
অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ডিনদের আজকের মধ্যে পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে তিনি এ আলটিমেটাম দেন। আওয়ামীপন্থি ডিনদের আগামীকাল চেয়ারে দেখলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ‘বাকিটা বুঝিয়ে দেব’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তবে আওয়ামীপন্থি ডিনরা বলছেন, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তাদের পদে থাকার কোনো আগ্রহ নেই। উপাচার্যের আদেশে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তাদের পদত্যাগেরও সুযোগ নেই; দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হলে উপাচার্যকেই ডিনদের অব্যাহতি দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি, ডিন, সিন্ডিকেট, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এবং শিক্ষা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১২টি অনুষদের ডিন (অধিকর্তা) নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি হলুদ প্যানেল থেকে ছয় জন প্রার্থী নির্বাচিত হন। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিনদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে।
তবে উপাচার্য গত ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী চলতি ডিনদের মেয়াদ-পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত স্বপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থি ডিনরা হলেন: আইন অনুষদের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদের নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ, প্রকৌশল অনুষদের বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ডিনদের অপসারণ করানো হয় নাই। নির্বাচিত বলে পুরো দেড় বছর স্টে করাইছেন প্রশাসন। গতকাল ১৭ ডিসেম্বর ডিনদের মেয়াদ শেষ হইছে, শুনেছি এই ডিনদের আবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।’
পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আল্টিমেটাম আমি ফিলআপ করে তারপর ছাড়ি—এটা প্রশাসন ভালো মতো জানেন। আওয়ামীপন্থি ডিনরা আগামীকাল ডিন অফিসের চেয়ারে দেখলে শাউয়া কেটে কাউয়া দিয়ে খাওয়াব। আজ সময় দিলাম রিজাইন দেওয়ার জন্য সম্মানের সাথে। আগামীকাল অফিসে গিয়ে বাকিটা বুঝিয়ে দিবো।’
রাকসুর এই জিএস আরও লিখেছেন, ‘নমনীয়তা আমাদের জন্য কাল হয়ে গেছে। আগামীকাল আল্লাহর ওয়াস্তে কোনো শিক্ষার্থীকে যেন না দেখি এদের পক্ষ নিতে। তাদের পদত্যাগের সময় দিলাম এই কর্মদিবস। সাথে সাথে রাবিয়ানদের অনুরোধ জানাব, আগামীকাল রাকসু ভবনের সামনে সকাল ১০টায় চলে আসবেন।’
তবে আওয়ামীপন্থি ডিনরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ডিনরা কিংবা উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করেন। এটি একটি নির্বাচিত পদ। এই পদ থেকে পদত্যাগের অধিকার ডিনদের নেই। ফলে ইচ্ছা করলেই তারা পদত্যাগ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ডিনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যকে সকল ডিনের দায়িত্ব নিতে হবে কিংবা ওইসব ডিনকে স্বপদে দায়িত্বে রাখতে হবে। উপাচার্য আমাদের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে যেহেতু আমাদের মেয়াদ গতকাল শেষ হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে এই পদে থাকার ইচ্ছা নাই।’
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার পদত্যাগের কোনো অধিকার নেই। উপাচার্য যেহেতু দায়িত্ব দিয়েছেন, উপাচার্যকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি চাইলে আরেকটি চিঠি ইস্যু করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।’
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধিকর্তা এ এস এম কামরুজ্জামান বলেন, এটি একটি নির্বাচিত পদ। ডিনদের পদত্যাগের অধিকার নেই। ফলে ইচ্ছা করলেই তারা পদত্যাগ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। করোনার সময়ও ডিনদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিনের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কথা বলা ঠিক না। তিনি উপাচার্যকে এ বিষয়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য বলতে পারেন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. মাঈন উদ্দিন বলেন, রাকসুর জিএস তাকেও জানিয়েছেন। যেহেতু উপাচার্য ডিনদের রুটিন দায়িত্ব দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে উপাচার্যই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।



