Logo
Logo
×

শিক্ষা

মাদ্রাসায় চালু হচ্ছে ‘ব্যবসায় শিক্ষা’, অনুমোদন পেতে শর্ত প্রযোজ্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম

মাদ্রাসায় চালু হচ্ছে ‘ব্যবসায় শিক্ষা’, অনুমোদন পেতে শর্ত প্রযোজ্য

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথমবারের মতো দাখিল (এসএসসি সমমান) স্তরে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু হতে যাচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই দেশব্যাপী নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে মাদ্রাসাগুলোতে এই বিভাগ চালুর অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।

এরই মধ্যে নতুন কারিকুলাম ও পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর জন্য শতাধিক মাদ্রাসা আবেদন করেছে। আর ২০২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য জমা পড়েছে আরও প্রায় ৮০টির বেশি আবেদন।

জানা গেছে, মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর উদ্যোগ এটি প্রথম নয়। এর আগে গত এক দশকে দুই দফায় এই প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের অনীহা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নীতিগত অসহযোগিতার কারণে তৎকালীন সময়ে উদ্যোগটি থেমে যায়।

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের দিকে প্রথমবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর নীতিগত আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু সে সময় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন নিয়ে অস্পষ্টতা, বাজেট সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিষয়টি এগোয়নি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার এই প্রস্তাব তোলা হলে পরিবর্তনশীল সরকারি অগ্রাধিকার এবং প্রশাসনিক সাড়া না পাওয়ায় উদ্যোগটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়।

মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর উদ্যোগ এটি প্রথম নয়। এর আগে গত এক দশকে দুই দফায় এই প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের অনীহা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নীতিগত অসহযোগিতার কারণে তৎকালীন সময়ে উদ্যোগটি থেমে যায়

নীতিনির্ধারকদের মতে, তখন মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় আনার কথা বলা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যপুস্তক তৈরি, কারিকুলাম অনুমোদন— প্রতিটি ধাপেই নানা প্রাতিষ্ঠানিক বাধা প্রকল্পটিকে স্থবির করে তোলে।

তবে, বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নতুন শিক্ষা কাঠামো, দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার ওপর জোর এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় কর্মমুখী বিষয় যুক্ত করার সরকারি আগ্রহের কারণে এবার উদ্যোগটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাদের মতে, এখন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক সহযোগিতা থাকায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিও দ্রুত হয়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মিঞা মো. নূরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয় চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, শুরুতে সব মাদ্রাসায় এর অনুমোদন মিলবে না। সেজন্য তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে-

প্রথমত, সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় চলতি বছরে অষ্টম শ্রেণিতে ন্যূনতম ১০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামো থাকতে হবে, যাতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য অন্তত দুটি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ চালু করলেও অন্যান্য ক্লাস ব্যাহত না হয়। তৃতীয়ত, এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ না আসা পর্যন্ত মাদ্রাসার নিজস্ব তহবিল থেকে খণ্ডকালীন ব্যবসায় শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই তিনটি মাপকাঠি (ক্রাইটেরিয়া) যাদের আছে এবং যারা আগ্রহী, কেবল তারাই আবেদন করতে পারবেন। বাস্তবতা দেখে পরবর্তীতে শর্ত শিথিল করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিষয় চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, শুরুতে সব মাদ্রাসায় এর অনুমোদন মিলবে না। সেজন্য তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মিঞা মো. নূরুল হক বোর্ডের রেজিস্ট্রার দপ্তর বলছে, এরইমধ্যে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খোলার জন্য শতাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। আর ২০২৭ সালের জন্য জমা পড়েছে আরও প্রায় ৮০টি মাদ্রাসার আবেদন।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ছালেহ আহমাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে অবদান রাখতে পারে।’

তিনি বলেন, এসব আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব সুবিধা এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা যাচাই করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী শর্ত পূরণ হলেই কেবল পর্যায়ক্রমে অনুমোদন দেওয়া হবে। এজন্য বোর্ড সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মাননিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেই অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমানে যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে অবদান রাখতে পারে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ছালেহ আহমাদ

অন্যদিকে বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, যুগোপযোগী শিক্ষার বিস্তারে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশে ব্যাংকিং, হিসাবরক্ষণ, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ইসলামী অর্থনীতি— এসব ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা এত দিন এই মূলধারার সুযোগ থেকে বেশিরভাগই বঞ্চিত ছিল।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালুর জন্য কারিকুলাম ও পাণ্ডুলিপির চূড়ান্তকরণ এখন শেষ পর্যায়ে। নতুন বইগুলোর প্রায় ৯৫ শতাংশ সাধারণ স্কুল–কলেজের ব্যবসায় শিক্ষার বইয়ের মতোই হবে। তবে ইসলামী অর্থনীতি, সুদের ধারণা, নৈতিক ব্যবসা পরিচালনা ও শরিয়াহভিত্তিক বাণিজ্যব্যবস্থা— এসব অতিরিক্ত বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। আগেও দুবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু নীতিগত ও কাঠামোগত নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে নীতিগত অগ্রাধিকারে এই উদ্যোগ দ্রুত এগোচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এর ফলে আধুনিক ব্যবসায়িক দক্ষতার পথে বড় সুযোগ পাবে।’

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। আগেও দুবার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু নীতিগত ও কাঠামোগত নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে নীতিগত অগ্রাধিকারে এই উদ্যোগ দ্রুত এগোচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এর ফলে আধুনিক ব্যবসায়িক দক্ষতার পথে বড় সুযোগ পাবে

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ ‘বছরের শুরুতেই নতুন বিভাগে পাঠদান শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় নিয়ে বই পৌঁছানো হবে। তবে, পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইগুলো আরও আধুনিকায়ন করা হবে’— বলেন ড. হেদায়েতুল্লাহ।

অন্যদিকে, মাদ্রাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ  চালু করতে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে বড় পরিবর্তনের উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন  মাদ্রাসাপ্রধানরা। তারা বলছেন, বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী। দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির দাবি ছিল। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর ফলে এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার পাশাপাশি আধুনিক ব্যবসায়িক জ্ঞান লাভ করে দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবে। এই উদ্যোগ মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে।

ময়মনসিংহের কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। এত দিন মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য কর্মসংস্থান ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র কিছুটা সীমিত ছিল। নতুন এই বিভাগ চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেট হাউজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাবে।’ 

‘আমরা আশা করি, তারা ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সঙ্গে আধুনিক ব্যবসায়িক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে সৎ ও যোগ্য উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে’— মনে করেন এই অধ্যক্ষ।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন