১০ বছর পর ছাত্রত্ব ফিরে পেলেন রাবি শিক্ষার্থী রফিকুল
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ এএম
দীর্ঘ এক দশকের ভোগান্তি, রাজনৈতিক ট্যাগ এবং প্রশাসনিক জটিলতা পেরিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও গোল্ড মেডেলিস্ট রফিকুল ইসলাম অবশেষে পেলেন মাস্টার্সের ফলাফল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রিভিউ শেষে (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে তার মাস্টার্সের চূড়ান্ত ফলাফল। এতে তিনি অর্জন করেছেন সিজিপিএ ৪ দশমিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রফিকুল (২০০৭-২০০৮) সেশনে ফলিত গণিত বিভাগে শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বর্ষেই তিনি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে। তারপর থেকে শুরু হয় বিরোধীদের দমন-পীড়ন। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জেল থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আবারও প্রথম হন তিনি। অনার্সে ৩ দশমিক ৮০ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান লাভ এবং অর্জন করেন গোল্ড মেডেল।
২০১৪ সালে বিভাগে ২ জন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে রফিকুল এপিয়ার্ড সনদ দিয়ে আবেদন করেন। এরপরই শুরু হয় নতুন জটিলতা। একই বছর বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর শামসুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে নম্বরপত্র টেম্পারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়, যার সঙ্গে রফিকুলকেও জড়ানো হয়। যদিও তদন্তে অভিযোগে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান খান আকাশ তৎকালীন উপাচার্যের কাছে রফিকুলের ব্যাপারে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ করেন এবং বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে মানববন্ধনও করান তিনি এমনটা শোনা যায়। রাজনৈতিক চাপ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ফলে শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার কর্তৃক থিসিস জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৩ অক্টোবর উপাচার্যের বরাবর রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহালের আবেদন করেন তিনি। আবেদন পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রিভিউ কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁর ছাত্রত্ব পুনর্বহাল এবং সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
পরবর্তীতে থিসিস যাচাইয়ের জন্য আরেকটি রিভিউ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়। কমিটি সংশোধনের নির্দেশ দেয়। সংশোধিত থিসিস মূল্যায়নের পর আজ তাঁর মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
রফিকুল তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আল্লাহর কাছে শুধু চেয়েছিলাম, মৃত্যুর আগে যেন সম্মানটা ফিরে পাই। আজ সেই দোয়া কবুল হয়েছে। এ সম্মান ফিরে পেতে অনেকের ত্যাগ রয়েছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পেছনে যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?



