রাবিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রতিষ্ঠাতা ও জুম্ম জাতির নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্মরণসভা ও মোমবাতি প্রজ্বলন করেছে জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা এ আয়োজন করে।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি বিজয় চাকমা বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পুরো বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্বে যারা নিপিড়ীত জনগোষ্ঠী রয়েছে সেই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী একটি অন্যতম কন্ঠস্বর ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীকে একই কাতার আনার জন্য তিনি আস্তে আস্তে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করেন এবং ১৯৭২ সালে তিনি পার্বত্য জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং একই সাথে পরিচালনা করেন।"
বিজয় আরও বলেন, "১৯৭২ সালে সংবিধান রচনা করা হয় সেই সংবিধানে সকল নাগরিককে বাঙালি হিসেবে পরিচয় করানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। লারমা শুধু সত্তর আশি দশকে সীমাবদ্ধ নেই, বর্তমান পর্যায়ে এখনো বাংলাদেশের অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মাঝে তাদের চিন্তাধারায় সেই গণপরিষদের বিতর্ক ছোয়া দেখতে পাই।"
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাচুর্য্য চাকমা বলেন, "১৯৮৩ সালের এই দিনে জুম্ম জাতির অগ্রদূত মহান নেতা এম এন লারমাকে আমরা হারিয়েছি। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন রাতে ঘাতকরা বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করেও তারা তাঁর আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। আজ পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে তাঁর নীতি ও চিন্তা বেঁচে আছে।"
তিনি আরও বলেন, "এম এন লারমা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন। কাপ্তাই বাঁধের বিরোধিতা করে তিনি পাহাড়িদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না থাকায় তিনি সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন শোষিত-নিপীড়িত মানুষের দূরদর্শী নেতা।"
রাবির লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী উৎস চাকমা বলেন, "মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আপসহীন নেতা। তিনি বুঝেছিলেন স্বাধীনতার পরও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭২ সালের সংবিধানে বলা হয় বাংলাদেশের সকল নাগরিকই বাঙালি- এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘আমি চাকমা, আমার নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও পরিচয় রয়েছে, আমি কোনোদিন বাঙালি নই।"
তিনি আরও বলেন, "লারমা চেয়েছিলেন এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে প্রত্যেক জনগোষ্ঠী নিজেদের স্বকীয় মর্যাদা নিয়ে সমান অধিকার ভোগ করবে।"
১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কষাঘাতে ক্ষমতালিপ্সু বিভেদপন্থীদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে তিনি সহ আটজন সহযোদ্ধা শহীদ হন।



