ছবি-সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষা হচ্ছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা। এজন্য বলা হয় শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।
শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি অসম্ভব। তাই দেশের কিংবা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রথমেই শিক্ষাখাতে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে মোহাম্মদপুর-আদাবর সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ ড. এইচ এম ওয়ালিউল্লাহ, অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ ও অধ্যাপক লিয়াকত আলী, হাজী ইউসুফ আহমেদ।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ধনতান্ত্রিক এ সমাজে জ্ঞানী-গুণিদের সভা, সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে ডাকা হয় না। ডাকা হয় ধনবানদের। সবাই এখন টাকার পেছনে ঘুরে।
তিনি বলেন, শিক্ষাকে সারাবিশ্ব গুরুত্ব দেয়। কেন? শিক্ষা হচ্ছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা। শিক্ষা ছাড়া সভ্যতা আসে না। শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। শিক্ষার উন্নয়নে আমি একটি কথা বলি, যার যার দায়িত্ব আমরা ঠিকঠাক মতো পালন করলে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা অসামান্য সাফল্য অর্জন করতে পারি। এখানে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হলো নিয়মিত পড়ালেখা করা, পাঠে মনোযোগী হওয়া, হোম ওয়ার্ক নিয়মিত করা। শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে নিয়মি পাঠদান করা, সততার শিক্ষা দেওয়া। আর পরিবারের দায়িত্ব সন্তানকে শিক্ষালয়ে পাঠানো, হোম ওয়ার্ক করছে কিনা দেখা, সন্তান কার সঙ্গে মিশছে নজর রাখা। অভিভাবকদের দায়িত্ব বেশি হলেও অনেক অভিভাবক সন্তানকে স্কুল, কলেজে পাঠিয়ে মনে করেন দায়িত্ব শেষ এটা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, পরিবার হলো একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে পরিবারের সদস্যরা প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা ও মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পরিবারকে বলা হয় ‘জ্ঞানচর্চার সূতিকাগার’। পরিবার হলো ‘শাশ্বত বিদ্যালয়’, ‘চিরন্তন মাতৃসদন’। মানুষ তার সামগ্রিক জীবনে যত জ্ঞান, শিক্ষা, ঐশ্বর্য অর্জন করে তার সূচনাই হয় পরিবার থেকে।
শিক্ষা সেক্টরের প্রতি সরকারের উদাসীনতার সমালোচনা করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শিক্ষা খাতের বরাদ্দ। যদিও দীর্ঘদিন ধরে এ খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকেও শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ২ শতাংশের ঘরেই আটকে আছে। এ হার ৬ শতাংশ করার দাবি থাকলেও এর ধারে কাছেও যেতে চাইছে না বাংলাদেশ। জিডিপির হিসাবে এ অঞ্চলের দেশ ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কম। ইউনসেকোর চাওয়া ছিল জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির হিসাবে ৪ থেকে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া। কিন্তু এর কাছেও যাওয়া যায়নি।
ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, প্রশিক্ষিত ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক ছাড়া যেমন শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনি মান সম্পন্ন শিক্ষা ছাড়া উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখা তথা টেকসই উন্নয়নও সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষা হচ্ছে শিশুর উর্বর মস্তিকে বীজ বপনের মতো। প্রক্রিয়াগতভাবে এখানে যা-ই বপন করবে, তাই ফলবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানসম্মত শিক্ষার ধারণা একটি ব্যাপক বিষয়। শিক্ষা আদান-প্রদান একটি জটিল প্রক্রিয়া, এর সংক্ষিপ্ত কোনো পদ্ধতি নেই। মানসম্মত শিক্ষার ধারণায় শিশুরা সিলেবাস শেষ করল কি না সেটি মুখ্য বিষয় নয়, শিক্ষার্থীরা কী শিখল সেটি গুরুত্বপূর্ণ।



