Logo
Logo
×

অর্থনীতি

মধ্যপ্রাচ্যের ঋণ ছাড় কমছে

Icon

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যের ঋণ ছাড় কমছে

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখান থেকেই প্রবাসী আয় বেশি আসে। তবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এ অঞ্চলের ঋণ সহায়তা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর তুলনায় সামান্যই। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ সদ্যবিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেশ খানিকটা কমেছে। 

ইআরডির তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঋণ ছাড় হয়েছিল ৭ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। আর সদ্যবিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে তা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ অর্থ ছাড় কমেছে ২ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। 

ইআরডির সংশ্লিষ্ট উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো ও কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে মধ্যপ্রাচ্যের ঋণ সহায়তা সবসময় কম। তাদের উৎসাহিত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা তো তাদের ব্যবসা না পেলে বিনিয়োগ করবে না। তাছাড়া আফ্রিকার দিকে তাদের নজর বেশি। সেদিকে তারা বেশি বিনিয়োগ করছে। ঋণ অর্থায়নের উৎস হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। 

মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনীতি সৌদি আরব। দেশটি বাংলাদেশে অর্থায়ন করে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি) মাধ্যমে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও বিনিয়োগ-অর্থায়নের জন্য এমন বেশ কিছু তহবিল গড়ে তুলেছে। যেমন কুয়েত অর্থায়ন করে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (কেএফএইডি) মাধ্যমে। আবার ওপেকভুক্ত আরব দেশগুলো সম্মিলিতভাবে গড়ে তুলেছে ওএফআইডি। 

ইআরডির তথ্য বলছে, সৌদি আরবের অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণে ৪৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৪ কোটি) ডলারের একটি ঋণ চুক্তি হয়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালিতে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঋণ অর্থায়ন হয়েছে ১২৮ মিলিয়ন (১২ কোটি ৮০ লাখ) ডলার। এর মধ্যে কুয়েত থেকে এসেছে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) থেকে এসেছে ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) ডলার। এ দুই প্রকল্পসহ ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ ও সংস্থাগুলো থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে মোট অর্থায়ন হয়েছে ৯৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের কিছু বেশি। 

এখন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সবচেয়ে বড় ঋণ অর্থায়ন এসেছে আইডিবির মাধ্যমে বিদ্যুতের সঞ্চালন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে ১৬৫ মিলিয়ন (১৬ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ঋণ অর্থায়নে ২০১৪ সালে চুক্তিবদ্ধ হয় আইডিবি। 

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার বিষয়ে ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি করে সংস্থাটি। একই বছরে সংস্থাটির সঙ্গে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে ৩০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণচুক্তি করে এলজিইডি। ওই বছরেই তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করে ওএফআইডি। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে এসএফডির মাধ্যমে ২০১৭ সালে ৩০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেয় সৌদি আরব। একই বছরে পানি সরবরাহ এবং কৃষি খাতের আলাদা দুটি প্রকল্পে মোট ১৩২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় আইডিবি। 

নগর অবকাঠামো উন্নয়নে ২০১৮ সালে কেএফএইডির মাধ্যমে ৫১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় কুয়েত। ২০২১ সালে পানগুছি সেতু নির্মাণে আরও ৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করে দেশটি। একই বছর নলুয়া-বাহেরচর সেতু নির্মাণে ৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ গ্রহণে ওপেক ফান্ডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এসএমই খাতের উন্নয়নে আইডিবি থেকে একই বছরে ৪৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ পাওয়া যায়। সংস্থাটি স্যানিটেশন খাতে ৫৬ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয় ২০২২ সালে। 

মধ্যপ্রাচ্যের ঋণ ছাড় কমলেও বেড়েছে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের অর্থ ছাড়। বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ঋণ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। তারা ২১৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছাড় করেছে।

ঋণের অর্থ ছাড়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এশিয়া অঞ্চলের এই ঋণদাতা সংস্থাটি অর্থ ছাড় করেছে ২১৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা জাপান ছাড় করেছে ১৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়া ঋণ ছাড় করেছে ১২৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং চীন ছাড় করেছে ৩৯ কোটি সাত লাখ ডলার।

এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারত এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। দেশটি অর্থ ছাড় করেছে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এ ছাড়া এআইআইবি অর্থ ছাড় করেছে ৬৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার এবং অন্যান্য দেশ ও সংস্থা মিলিয়ে এসেছে আরও ১০৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ঋণদানে বিশ্বব্যাংক এগিয়ে থাকলেও বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতিতে এবার শীর্ষে আছে এডিবি। সংস্থাটি গত অর্থবছরে ২৯৪ কোটি ১২ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২৬১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, জাপান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার আর এআইআইবি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৪০ কোটি ডলারের। তবে গত অর্থবছরে কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি ভারত, চীন, রাশিয়া ও এআইআইবি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন