
প্রিন্ট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৯ এএম
রমজানে সয়াবিন তেল নিয়ে উদ্বেগ, সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৮ এএম

ফাইল ফটো
রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে ‘সয়াবিন তেল’ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহ সংকট থাকায় এ পণ্যটির বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজানে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কেমন থাকবে এবং দাম কত হবে—এই প্রশ্নগুলো ভোক্তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, রমজানে চিনি, ছোলা, খেজুরসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও সয়াবিন তেলের সরবরাহ ও দাম নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যদিও চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, তবুও সরবরাহে বাধা দেখা যাচ্ছে। বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছেন না এবং বোতলজাত তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য নেওয়ার শর্ত দিচ্ছেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। এতে খুচরা বিক্রেতারা সংকটে পড়ছেন এবং ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। তবে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না, বরং সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, রাজধানীর বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮৫-১৯০ টাকা, বোতলজাত এক লিটারের দাম ১৭৫-১৭৮ টাকা এবং দুই লিটারের দাম ৩৫০-৩৫৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থিরতা কমাতে সরকারকে কঠোর তদারকি চালাতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও বাজার তদারকির কার্যক্রম জোরদার করেছে এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
রমজান শুরুর আগে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও কিছুটা বেড়েছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩১০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। লেবু, শসা ও বেগুনের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তবে খেজুর, ছোলা, চিনি এবং অন্যান্য প্রধান নিত্যপণ্যের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে চিনি আমদানি ২০ শতাংশ, ডালজাতীয় পণ্য ৪৪ শতাংশ, ছোলা ৬৪ শতাংশ এবং মটর ডাল ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজ, রসুন ও আদার আমদানিও বেড়েছে, ফলে এসব পণ্যের কোনো সংকট নেই।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, রমজানের প্রথম দিকে অতিরিক্ত কেনাকাটার কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাই ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।