Logo
Logo
×

অর্থনীতি

সাদিক অ্যাগ্রো ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা

Icon

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১১:০৮ পিএম

সাদিক অ্যাগ্রো ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা

ফাইল ছবি

ভ্যাট ফাঁকি দিতে আলোচিত গরুর খামার সাদিক অ্যাগ্রো ১০ কোটি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছিল বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সাদিক অ্যাগ্রোর ১ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে সংস্থাটি। 

বুধবার (১০ জুলাই) এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির গুলশান, তেজগাঁও, মহাখালী ও মোহাম্মদপুরের চার দোকানে অভিযান চালিয়ে এ সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করে এনবিআর। পরবর্তীতে জব্দ করা নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাদিক অ্যাগ্রো ১০টি টাকার বিক্রির তথ্য গোপন করেছে। সেখান থেকে সরকার ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ভ্যাট হিসেবে পেত।

 এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সাদিক অ্যাগ্রোর রাজধানীতে চারটি আউটলেট রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকার। কিন্তু ভ্যাট রিটার্নে দেখানো হয় ৫ কোটি টাকা। অথচ জব্দ করা নথিপত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০ কোটির বিক্রি কম দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। গোপন করা ওই বিক্রির ওপর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির গুলশান, তেজগাঁও, মহাখালী ও মোহাম্মদপুরের চার দোকানে অভিযান চালিয়ে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত  বিক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায় ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৭ টাকা, যার ওপরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসাবে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ৪৮ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু নথিপত্র বলছে, সাদিক অ্যাগ্রো মাত্র ১৮ লাখ ২৩ হাজার ১৭৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭০ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করে নাই বা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এনবিআর জরিমানাসহ ভ্যাট আদায়সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ বলছে, সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি এনবিআর খতিয়ে দেখতে এনবিআর থেকে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করেন। সাদিক এগ্রোর চারটি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে ভ্যাট নিবন্ধিত। চারটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটের মোহাম্মদপুর ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। চারটি প্রতিষ্ঠান হলো—তেজগাঁও, গুলশান-২, মহাখালী ও মোহাম্মদপুর। মোহাম্মদপুর ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয় ও গুলশান ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বিত টিম চারটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় কর্মকর্তারা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি জব্দ করেন। এতে প্রাথমিকভাবে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পান কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ যাচাই অনুযায়ী দেখা গেছে, চারটি প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালের ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিক্রয় যাচাই করা হয়েছে। হিসাবে দেখা গেছে, সাদিক অ্যাগ্রোর তেজগাঁও লিংক রোডের আউটলেট সবচেয়ে বেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সেখানে প্রায় ৯৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এছাড়া গুলশান-২ এর প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৬ লাখ ও মহাখালীতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। তবে ফাঁকির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ফাঁকি প্রমাণিত হলে ফাঁকির সমপরিমাণ অর্থদণ্ড ও সুদ আরোপ করা হবে। অর্থাৎ ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই কোটি থেকে তিন কোটি টাকা। হিসাব চূড়ান্ত করা হলে মোহাম্মদপুর ভ্যাট বিভাগ সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও সাদিক অ্যাগ্রো ও সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের আয়কর নথি যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সেখানেও অনিয়মের তথ্য মিলেছে। বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

অন্যদিকে সাদিক অ্যাগ্রোর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু কোনো ধরনের নিলাম ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর মাধ্যমে জবাই করে ৬০০ টাকা কেজি দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি, গোপনে ব্রাহমা গরু বিক্রি ও গরু সিমেন বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। গত ২,৩ ৪ জুলাই সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুর, সাভার, নরসিংদী ও খামারবাড়ি প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়েছে দুদকের টিম।

২০২১ সালে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রোই। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। পরে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে নিজের কাছে নিয়ে নেন। 

আলোচিত ছাগলকাণ্ডে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগলটি সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ছাগলটি আর ওই খামার থেকে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার পর সাদিক অ্যাগ্রো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে অবৈধভাবে খাল ও সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা সাদিক অ্যাগ্রোর খামার ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন