ডিজিটাল লেনদেনে ১৫৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০২তম, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের ৯৯ থেকে শতভাগ মানুষই এ ধরনের লেনদেনে যুক্ত। ছবি সংগৃহীত
ঘরে বসে কেনাকাটা এখন শহুরে মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। গ্রামের মানুষও নানা ধরনের সেবা পেতে ডিজিটাল লেনদেনে ঝুঁকেছেন। তারপরও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে নিচের দিকের দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছরের বেশি) জনগোষ্ঠীর মাত্র ৪৫ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। ফলে ডিজিটাল লেনদেনে বিশ্বের ১৫৭টি দেশের বাংলাদেশের অবস্থান ১০২তম।
সম্প্রতি ডিজিটাল অগ্রগতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশের এই চিত্র উঠে এসেছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় ডিজিটাল লেনদেনে বাংলাদেশ পেছনের সারিতে থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে পিছিয়ে আছে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে। ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনের বড় একটি অংশ এখন হচ্ছে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ রয়েছে ১১ কোটি ৮৯ লাখ ১৬ হাজার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ ডিজিটাল লেনদেন করেন।
বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের ৯৯ থেকে শতভাগ মানুষই এ ধরনের লেনদেনে যুক্ত। এই তালিকায় শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। দেশটির সব মানুষ ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় রয়েছে। তালিকায় অন্য ৯টি দেশ হলো অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, আইসল্যান্ড, জার্মানি ও এস্তোনিয়া।
অন্যদিকে আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে এখনো ডিজিটাল লেনদেনব্যবস্থা চালু হয়নি। তাই বিশ্বব্যাংকের তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৫৭তম। এ ছাড়া তলানির দিকে থাকা বাকি ৯টি দেশ হলো বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজার, ইরাক, লেবানন ও ভুটান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ফোনে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা।
ইন্টারনেট ব্যবহার পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ৩৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৩২ শতাংশ মানুষ। বাকি ৭ শতাংশ মানুষ ব্রডব্যান্ড লাইনে ইন্টারনেট সেবা নেন। অন্যদিকে শতভাগ জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, এমন দেশের তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আইসল্যান্ড ও বাহরাইন।
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতিবছর এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত ৪৫২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলারের দাম ১১৭ টাকা) দেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে ১৬ লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আইসিটি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যত কর্মসংস্থান হয়, তার ২৯ শতাংশ নারী।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের শ্লথগতি একটি বড় সমস্যা হিসেবে মনে করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বছরে সাতবার বড় ধরনের ইন্টারনেট বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়। এই ধরনের ইন্টারনেট বিপর্যয় ব্যবসার গতি কমিয়ে দেয়, আবার প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান থেকেও পিছিয়ে দেয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, গত এক দশকে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা বেড়েছে। এর ফলে দেশের ভেতরের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও অর্থ পাঠানো যাচ্ছে। ডিজিটাল লেনদেন আরও বাড়াতে হলে মাশুল কমাতে হবে।