Logo
Logo
×

অর্থনীতি

ইসলামী ব্যাংকের ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের তথ্য চেয়েছে দুদক

পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া চার গ্রুপকে দেওয়া হয় ঋণ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

ইসলামী ব্যাংকের ১৫ হাজার কোটি  টাকা ঋণের তথ্য চেয়েছে দুদক

ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির তদন্তে দুদক।

নাবিলগ্রুপসহ চার প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির তদন্তে সুষ্ঠ অনুন্ধানের স্বার্থে রেকর্ড পত্র চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের ঠিকানা ব্যবহার করে ১১টি প্রতিষ্ঠানের নামে সৃষ্ট ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণও রযেছে। ওই ঋণের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত একটি পক্ষ বিশেষ সুবিধা নিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তথ্য রয়েছে।  আর চট্টগ্রাম ভিত্তিক ৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই গতকাল গতকাল সোমবার দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক ও নাবিল গ্রুপের ১১ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মো. গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত ঋণগুলো সম্পর্কে রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জানান, চিঠিতে চট্টগ্রামের চাকতাই ইসলামী ব্যাংক শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংকের জুবলী রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিঃ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়া হয়েছে। 

এছাড়া একই চিঠিতে ইসলামী ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান করপোরেট শাখা, রাজশাহী ও নিউমার্কেট শাখা, রাজশাহী এবং পাবনা শাখা, পাবনার গ্রাহক নাবিল গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের ঋন জালিয়াতির অনুসন্ধানকালে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাত।

দুদক সূত্রে জানা গেছে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণ সনাক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এ ঋণ বের করা হয়েছে। ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি তদন্তে। নামসর্বস্ব এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া এসব ঋণ ফেরত অথবা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, সরেজমিন এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয়। বাকি টাকা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আগের ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ঘুরিয়ে এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করা হয়। এভাবে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন ঋণের মাধ্যমে পুরোনো ঋণের অর্থ পরিশোধ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং ইসলামী শরিয়াহ পরিপন্থি। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে মালপত্র না থাকায় এসব বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, বিনিয়োগের অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়ার দায়-দায়িত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রধান কার্যালয়ের সংশ্নিষ্ট বিভাগ এবং শাখা ব্যবস্থাপনার ওপর বর্তায়। 

ইসলামী ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, জুবিলী রোড শাখা থেকে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও চাক্তাই শাখা থেকে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নির্বাহী কমিটির ১৯৫৯তম সভায় বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের মেয়াদ ইতোমধ্যে অতিক্রম করায় বকেয়া স্থিতি অবিলম্বে ১৫ দিনের মধ্যে আদায় করতে হবে। আদায় করতে না পারলে ক্ষতিজনক, মানে খেলাপি করে জানাতে হবে। আর এ বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ, অনুমোদন ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের শুরুতে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে পরিদর্শন করে অস্তিত্বহীন হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো আগের মতোই একই উপায়ে ঋণের টাকায় ঋণ পরিশোধ অব্যাহত আছে। এখন ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে তিন প্রতিষ্ঠানের ঋণস্থিতি ছিল ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ওই বছর ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্টের নামে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮৫ কোটি টাকা সৃষ্টি করা হয়েছে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। ব্যাংকের নথিতে এর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার নন্দিরহাটের ১ নম্বর সাউথ পাহাড়তলী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল ওই ঠিকানায় গিয়ে আব্দুল্লাহ ফুড প্রডাক্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়। ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা ঋণের সবই নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে বের করা হয়েছে ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণেরও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে।

নাবিল গ্রুপের ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা: 

এদিকে রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের ঠিকানা ব্যবহার করে ১১টি প্রতিষ্ঠানের নামে সৃষ্ট ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত কেউ সুবিধাভোগী বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারণা করছে। এসব ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী বের করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ জালিয়াতি ও নিয়োগ পদোন্নতিতে অনিয়ম ঠেকাতে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পর্ষদে পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে। এ ছাড়া দৈনিক ভিত্তিতে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণের তথ্য নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

দুদকের কর্মকর্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের নাবিল গ্রুপের পরিমানা ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা ২০২২ সালের ২১ মার্চ নাবিল ফিড মিলস ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়। ব্যাংকটির গুলশান শাখায় নাবিল গ্রেইন ক্রপসের নামে অনুমোদন দেয়া হয় ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ।

অর্থাৎ এই ব্যাংকটি দিচ্ছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। একই বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪৬তম বোর্ড সভায় নাবিল নব ফুড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নাবিল ফিড মিলস এবং শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। একই বছরের ৩০ মে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮১তম বোর্ড সভায় গুলশান শাখা থেকে নাবিল নব ফুড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, নাবিল ফিড মিলস এবং শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ৪৫০ কোটি এবং নন ফান্ডেড (এলসি ও ব্যাংক গ্যারান্টি) ৬৭০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগসীমা নতুনভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, কিন্তু কোন খাতে এই টাকা ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই।

নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হলেও পর্যাপ্ত নথি নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়, অধিকাংশ ঋণেই কোনো ধরনের জামানত রাখা হয়নি। এই ঋণের অর্থ কোথায় ব্যবহার হবে তাও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া নতুন একটি গ্রুপকে এত টাকা ঋণ দেয়া হলেও তার পর্যাপ্ত নথি সংরক্ষণ করা হয়নি।

গ্রুপের একটি কোম্পানিকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮১তম বোর্ড মিটিংয়ে ঋণ অনুমোদন দেয়া হলেও ৪৮২ এবং ৪৮৩তম বোর্ড সভায় শর্ত শিথিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির ক্ষেত্রে সব পরিচালক এবং তাদের স্বামী/স্ত্রীর গ্যারান্টি ছিল, কিন্তু পরবর্তী সময়ে শর্ত শিথিল করে শুধু পরিচালকদের গ্যারান্টি রাখা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে ৯৫০ কোটি টাকা নন ফান্ডেড ঋণ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে এই ঋণে ২৩০ কোটি টাকা জামানত হওয়ার কথা। ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত অথবা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। এক জায়গায় বলা আছে, কৃষিপণ্য আমদানি ও বিপণনের জন্য এই অর্থ ব্যবহার হবে, কিন্তু সর্বশেষ সিআইবি প্রতিবেদন অনুসারে বিভিন্ন ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের এক্সপোজার মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা। প্রকল্প ঋণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রাহক একেবারে নতুন। ফলে সম্পূর্ণ নতুন একজন গ্রাহককে বাণিজ্যের জন্য এই পরিমাণ ঋণ দেয়া হলো। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের বড় ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তা যাচাই করা দরকার। নাবিল ফিড মিলসের নামে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা, কিন্তু নাবিল গ্রেইন ক্রপস কোনো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন