বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। প্রায় এক মাস পর ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ কমলেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ওপর ভিত্তি করে আবারও তা বেড়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমান রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে তা ২৪ দশমিক ৭৫ বিলয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেলে চলতি ডিসেম্বরেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। গত আওয়ামী লীগ সরকারের লাগামহীন অর্থ পাচার ও নানা অনিয়মের কারণে রিজার্ভকরে তলানিতে নামে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১১ নভেম্বর আকুর মাধ্যমে আমদানি পণ্যের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বিল বাবদ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। ফলে রিজার্ভ কমে ১৮ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে (বিপিএম-৬) নেমে যায়। গত এক মাসে বিদেশি মুদ্রার এই সঞ্চয় বাড়তে বাড়তে আবারও তা ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের তিনটি হিসাব সংরক্ষণ করে। এর প্রথমটি হলো, বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভ। মোট রিজার্ভের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ শর্তের ঋণসহ কয়েকটি তহবিল। দ্বিতীয়টি হলো, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবায়ন পদ্ধতি, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল বা ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে একটি তহবিল।
গ্রস রিজার্ভ ও বিপিএম-৬ এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়, প্রকাশ করে না। চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আছে এক হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো ছিল (১৫ বিলিয়ন ডলার )। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো কষ্টকর হয়ে যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুবার ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সেসময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আবার বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ১ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হলে এ মাসেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা গণমাধ্যমকে বলেন, রিজার্ভ চলমান একটি বিষয়। একবার কমবে, আবার বাড়বে। এখন প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ইতিবাচক, রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। শিগগির ২০ বিলিয়ন ডলারে রিজার্ভ উন্নীত হবে বলে আশা করছি।
গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেয় প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এরপর নতুন সরকার গঠনের পর আবার দেশ গঠনে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। এর ফলে আবারও প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করে। সবশেষ নভেম্বর মাসে দেশে প্রবাসী আয় বেড়ে ২২০ কোটি (২ দশমিক ২০ বিলিয়ন) দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার এবং অক্টোবরে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের টানা চার মাস ২ বিলিয়নের ওপরে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা।