সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপানো আত্মঘাতী ও গণবিরোধী : আইএমএফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষার পদক্ষেপকে ‘আত্মঘাতী’ আখ্যায়িত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার দুর্বলতা ও দায়িত্বহীন পরিদর্শনের সুযোগে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। ঋণ জালিয়াতি এবং ব্যাংক তছরুপে সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অবহেলার পরিচায়ক বলে অভিযোগ করেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় ঢাকায় অবস্থানরত আইএমএফ মিশনটি সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে তারা বিএফআইইউ এবং ব্যাংকগুলোর শিথিলতা ও অবহেলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবারের বৈঠকেও একই বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদল পরিস্থিতি দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইএমএফের সদস্যরা দাবি করেছেন, প্রেসক্রাইবড পরিদর্শনের মাধ্যমে বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে ঋণ অনাচারের কারণে ব্যাপক অর্থ হরিলুট হয়েছে। ঋণের নামে চুরি ও ডাকাতি একসঙ্গে সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি গ্রুপ এবং কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক খাতের নিয়মকানুনকে নিজেদের স্বার্থে ভেঙে ফেলেন। যার ফলে ব্যাংক খাত পঙ্গু হয়ে পড়েছে এবং সেখান থেকে দেখা দিয়েছে তারল্যসংকট। আরো কিছু ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে, যার কারণে গ্রাহকদের আস্থা তলানিতে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকার নগদ সহায়তা দিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। উসকানি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কিছু দুর্বলতা আইএমএফ ‘রেড মার্ক’ করে চিহ্নিত করেছে এবং ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের কড়া নজরদারি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) শিথিলতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষত গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি প্রভাবশালী মহল বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও বিএফআইইউ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আইএমএফ পাচারে সন্দেহভাজন কিছু হিসাব তলব, লেনদেনে স্থিতাদেশ এবং জব্দের মতো পদক্ষেপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়ে বিএফআইইউর সদস্যদের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, আইএমএফ এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছে।