পাঁচ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় এনবিআরের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ এএম
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই–নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময়ে লক্ষ্যের তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মাসিক রাজস্ব প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) থেকে এসেছে ৫৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা।
এই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মূসকে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। পাশাপাশি আয়করে ১৭ শতাংশ এবং আমদানি-রপ্তানি খাতে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিনটি প্রধান খাত—আমদানি শুল্ক, মূসক ও আয়কর—কোনোটিতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়করে, যার পরিমাণ ১২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এ খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৫৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
আমদানি খাতে ৫০ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। আর মূসকে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, যেখানে আদায় কম হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য মোট শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।
শুধু নভেম্বর মাসেই ৩৬ হাজার ৩২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। ফলে এ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। তবে নভেম্বরেও আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২৫ হাজার ৯৭০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
নভেম্বর মাসে আমদানি শুল্ক, মূসক ও আয়করে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ মাসে আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হয়েছে ৮ হাজার ১১০ কোটি টাকা, মূসক থেকে ১১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা এবং আয়কর থেকে ১০ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। তবে তিন খাতেই ঘাটতি ছিল—আমদানিতে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, মূসকে ২ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং আয়করে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতির কারণে চলতি সময়ে রাজস্ব আদায় তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে সাধারণত অর্থবছরের শেষ দিকে আয়কর আদায় বাড়ে, ফলে তখন রাজস্ব সংগ্রহে গতি আসতে পারে বলে তারা আশা করছেন।



