Logo
Logo
×

অর্থনীতি

এক মাসে পেঁয়াজে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮ এএম

এক মাসে পেঁয়াজে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা

দেশের পেঁয়াজবাজারে গত এক মাসে ব্যাপক কারসাজি করে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্যবসায়ী পরিচয়ে গড়ে ওঠা অসাধু সিন্ডিকেট চক্র। বাজার পর্যবেক্ষণ, সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে—এই চক্রে জড়িত আছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা, যারা শুধু পেঁয়াজ নয়, বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা–সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেন।

অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার ধাপ।

১৭–৩০ অক্টোবর — ১৪ দিনে কেজিপ্রতি ২০–২২ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হয় ২৫২ কোটি টাকা।

৩১ অক্টোবর–৫ নভেম্বর — ছয় দিনে কেজিপ্রতি আরও ৩৫–৩৬ টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হয় ১৮৯ কোটি টাকা।

৬–১৫ নভেম্বর — কেজিতে ৬০–৬৫ টাকা বাড়িয়ে অতিরিক্ত ৫৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট।

সব মিলিয়ে এক মাসে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৯৮১ কোটি টাকা।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—সিন্ডিকেট করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে, সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি। পুরোনো সিন্ডিকেট নতুন রূপে সক্রিয় হয়েছে এবং নতুন অসাধু ব্যক্তিরাও এতে যুক্ত হয়েছে।

সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর শক্তিশালী এ সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আসছে এবং সরকারি মহলের কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের সহায়তা দিয়ে থাকেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি মাসেই বাজারে এসেছে প্রায় ৭৫ হাজার টন নতুন দেশি পেঁয়াজ, ফলে ঘাটতির কোনো কারণ নেই। একই প্রতিবেদনে উল্লেখ—মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিই মূলত দায়ী।

বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না; মধ্যস্বত্বভোগীরাই পুরো লাভ নিচ্ছেন।

গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ, কিন্তু সংরক্ষণের দুর্বলতার কারণে ২৫–৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারে আসে মাত্র ৩৩ লাখ টন, যেখানে বার্ষিক চাহিদা ৩৫–৩৬ লাখ টন।

এ কারণে প্রতিবছর ৭–১০ লাখ টন আমদানির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির ৯৯ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বর্তমানে পণ্যটির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক থাকলেও আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ আছে।

চট্টগ্রামের চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের অসাধু ব্যবসায়ীরা সীমান্তবর্তী কিছু আমদানিকারকের সঙ্গে যোগসাজশে এক মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এই দুই বাজারে প্রতিদিন ৪০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ আসে—প্রতিটিতে ১৫ টনের বেশি—অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৬০০ টন লেনদেন।

দাম বাড়ানোর তিন ধাপ : ১৭ অক্টোবরের আগে দাম ছিল ৬২–৬৫ টাকা, ১৭–৩০ অক্টোবর দাম হয় ৭০–৭৫ টাকা → হাতিয়ে ৭.৫ কোটি, ৩১ অক্টোবর–৫ নভেম্বর দাম ৮০–৮৫ টাকা → হাতিয়ে ৬.৮৫ কোটি, ৬ নভেম্বর থেকে বর্তমান দাম ১০৫–১১০ টাকা → দুই সপ্তাহে লুট ২৬.৫ কোটি, মোটে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের কমিশন এজেন্টরা জানান, তারা দাম নির্ধারণ করেন না; সীমান্তবর্তী এলাকার বড় আমদানিকারক ও মজুতকারীরাই প্রতিদিনের দাম ঠিক করে দেন।

ফরিদপুর–পাবনা অঞ্চলের বড় মজুতকারীরাও প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করে দেন।

মুদি ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, যে দামে তারা দেয়, সে দামেই নিতে হয়। মাঝারি পেঁয়াজ এখন ১১০ টাকা কেজি।

ক্রেতা নাদিম আহমেদ বলেন, ১২০ টাকা কেজি। এক টাকাও কমায় না। তাই আধা কেজি কিনলাম।

রাজধানীর পাইকারি বিক্রেতারাও অভিযোগ করেন—মোকাম থেকেই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে; বাধ্য হয়েই সেই দামে বিক্রি করতে হয়।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন