দেশে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এই নিত্যপণ্যের মূল্য। এর মধ্যে গত তিন-চার দিনেই দাম বেড়েছে ২০ টাকার বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গত মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে আগাম পেঁয়াজের কিছু জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি বন্ধ থাকায় মজুতকারীরা সুযোগ নিচ্ছেন, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত মৌসুমের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পেঁয়াজ এখনো মজুত রয়েছে, বাকি ৯০ শতাংশ ফুরিয়ে গেছে। নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ চাষ শুরু হলেও বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজারে বৃহস্পতিবার ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১১০ টাকায়, আর বড় আকারের পেঁয়াজ ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৮০–৮৫ টাকায়, অর্থাৎ এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০–৩৫ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০–১২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০–৮০ টাকা। যদিও গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ১৩০–১৫০ টাকা।
শ্যামবাজারে পাইকারি পর্যায়ে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০–৯৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫–৭০ টাকা।
শ্যামবাজারের আড়তদার অপু ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মিঠু বলেন, এখন মাত্র ১০ শতাংশ কৃষকের হাতে কিছু পেঁয়াজ আছে। এতে ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও পাবনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাটে দাম বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সারাদেশের খুচরা বাজারে।
ফরিদপুর ও পাবনাসহ বিভিন্ন হাটে মঙ্গলবার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪,২০০ টাকায়, যা বুধবার কিছুটা কমে ৩,৮০০ টাকায় নেমেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুই ধাপে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়—মুড়িকাটা ও হালি জাতের পেঁয়াজ। মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাজারে আসবে। ফলে আগামী দেড় মাস সরবরাহ কম থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আগেই সুপারিশ করেছিল, পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা ছাড়ালে আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষিসচিব জানিয়েছেন, ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তাই বড় ঘাটতির আশঙ্কা নেই। তবে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে দ্রুত আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, এখনও পেঁয়াজ আমদানির কোনো আবেদন আসেনি। সরকার অনুমোদন দিলে আবেদন নেওয়া হবে।
দেশে বছরে প্রায় ২৬–২৭ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন হয় প্রায় ৩৮ লাখ টন। তারপরও সংরক্ষণ ঘাটতি ও বাজার অস্থিরতার কারণে প্রতিবছর ৬–৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।



