কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনায় বিশ্ববাজারে দাম উর্ধ্বমুখী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০২ এএম
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দুর্বলতা, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমে যাওয়ার মতো কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যান জানিয়েছে, অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলার বা বন্ডের পরিবর্তে সোনার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে রিজার্ভ সোনা দিয়েই গঠিত হলেও, শিল্প বিপ্লব ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের বিস্তারের পর তা ধীরে ধীরে বিদেশি মুদ্রা ও বন্ডে রূপান্তরিত হয়। তবু এখনো প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের রিজার্ভের একটি অংশ সোনায় ধরে রাখছে, কারণ সোনার মূল্য সাধারণত দ্রুত পতিত হয় না।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে মোট ৩৬ হাজার ২০০ টন সোনার রিজার্ভ ছিল, যা তাদের মোট সম্পদের ২০ শতাংশ। ২০২৩ সালে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে চীন, তুরস্ক, ভারত, ইরাক এবং আজারবাইজান প্রায় ২০ টন সোনা কিনেছে।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডলারের দুর্বলতা, যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার হ্রাস, ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেশগুলোকে ডলারভিত্তিক সম্পদ থেকে সরে এসে সোনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস, ২০২৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আরও ৯০০ টন সোনা যোগ করতে পারে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানায়, বিশ্বের সর্বাধিক সোনার রিজার্ভ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে— মোট ৮ হাজার ১৩৩ টন, যা তাদের মোট বৈদেশিক সম্পদের ৭৮ শতাংশ। আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির হাতে রয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ টন সোনা, যা তাদের রিজার্ভের ৭০ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে সোনা কেনার দৌড়ে এগিয়ে আছে চীন। গত দুই বছরে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্রুত হারে সোনা কিনছে। বর্তমানে চীনের হাতে রয়েছে ২ হাজার ২৯৮ টন সোনা, যা তাদের মোট রিজার্ভের ৬.৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে তারা আরও ১৯ টন সোনা যোগ করেছে। ২০২৩ সালে চীন কিনেছিল ৮৮ টন সোনা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ১৪ দশমিক ৮ টন সোনার মালিক, যা দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
অন্যদিকে ভারতের রিজার্ভে রয়েছে ৮৮০ টন সোনা— প্রায় ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের, যা তাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ১৩ শতাংশ। পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ৬ দশমিক ৪ টন সোনা, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০০ কোটি ডলার।
চলতি অক্টোবরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৩৮০ ডলার ছুঁয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। পরবর্তীতে তা কিছুটা কমে আসে।
পণ্য বিশ্লেষক শামস-উল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ সোনার দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। যুক্তরাষ্ট্র শুল্কনীতি ঘোষণার পর চীন ব্যাপকভাবে সোনা কেনে এবং দাম বাড়ার পর বিক্রি করে মুনাফা করে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক আহসান মেহান্তি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে চলতি অর্থবছরের বাজেট বিল অনুমোদিত না হওয়ায় সরকারি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এতে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন বাজার থেকে সরে গিয়ে সোনায় বিনিয়োগ করে, যার ফলে দাম বেড়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে বিশ্ববাজারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়নীতিই আগামী বছরে সোনার দামের গতিপথ নির্ধারণ করবে।



