ঋণ না শোধ করেই এবার ব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা এস আলম গ্রুপের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
ঋণের টাকা শোধ না করে উল্টো পাওনাদার ব্যাংকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করছে বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম। গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছে গ্রুপটি। এসব মামলায় তারা ১৬ হাজার ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালে এস আলম গ্রুপের কর্ণধাররা গা ঢাকা দিলে পাওনাদার ব্যাংকগুলো আদালতের শরণাপন্ন হয়। ব্যাংক ও আদালতের তথ্যমতে, এস আলমের কাছে ৬৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে ইতিমধ্যে ৩৩টি মামলা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক এসব মামলা করেছে। আদালত এস আলম ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই দেশ ছাড়ার তথ্য রয়েছে।
শুধু ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধেই মে থেকে এ পর্যন্ত ১২টি মামলা করেছে এস আলম। এর মধ্যে ৭টি চট্টগ্রাম জজকোর্টে ও ৫টি ঢাকার জজকোর্টে দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলায় ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার কাছে ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ ২,৭৩৭ কোটি, এস আলম কোল্ডরোল্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ২,৫৫৭ কোটি, এস আলম স্টিলস ২৯২ কোটি এবং আরও কয়েকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কয়েক কোটি টাকার দাবি করে মামলা করেছে।
এস আলমের করা বেশির ভাগ মামলায় ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে ব্যাংকিং নথি বিশ্লেষণে স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে, নামে-বেনামে নেওয়া এসব ঋণের আসল বেনিফিশিয়ারি এস আলম গ্রুপই। ব্যাংকের আইনজীবীরা বলছেন, এসব মামলা আসলে ঋণ আদায় প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা এবং নিলাম ঠেকানোর কৌশল মাত্র।
এদিকে ইসলামী ব্যাংক জানায়, গ্রুপটির কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে তারা ১৯১টি এনআই অ্যাক্ট মামলা, ১৭টি অর্থঋণ মামলা করেছে এবং সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট করে নিলামে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এস আলম গ্রুপ নিলাম প্রক্রিয়াতেও বাধা দিচ্ছে। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ক্রেতাদের সতর্ক করছে যেন নিলামে তোলা সম্পত্তি না কেনা হয়।
জনতা ব্যাংক থেকেও এস আলম-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। ৬৮০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে এফডিআর লিয়েন থাকলেও নগদায়ন আটকে গেছে। এ নিয়ে রিট করলে আদালত সুদ আদায় স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা এস আলম চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংক খাতে লুটপাটের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হলো ইসলামী ব্যাংক। কারণ, এস আলম নামে-বেনামে এখান থেকে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি, প্রায় ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে কেবল খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে।



