পিএমআই অর্থনীতিতে গতি ফেরার বার্তা দিচ্ছে
শামসুল আলম সেতু :
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
দেশের মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বৈদেশিক ঋণের চাপ এবং কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সচ্ছলতা না ফিরলেও অর্থনীতির গতি বাড়ছে। দেশে উৎপাদন এবং সেবাখাতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। অধিকাংশ খাতই সামনে ধাবিত হয়েছে একমাত্র কৃষি খাত ছাড়া। গত মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় পাঁচ শত কোটি ডলার। অর্থনীতিতে গতি ফেরার বার্তা দিচ্ছে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে,দেশের অর্থনীতিতে গতি ফেরার বার্তা দিচ্ছে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স। গত জুলাই মাসে দেশের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স স্কোর দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৫, যা দেশের অর্থনীতিতে গতি ফেরারই বার্তা দিয়েছে । আগের মাসের তুলনায় এই স্কোর ৮.৪ পয়েন্ট বেশি । দেশের পরিষেবা খাতে টানা ১০ মাস ধরে সম্প্রসারণ হয়েছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, কর্মসংস্থান, ইনপুট ব্যয় এবং ব্যাকলগ - সব সূচকেই জুলাইয়ে শক্তিশালী সম্প্রসারণ দেখা গেছে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে, যা মূলত সেবা ও উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে । রপ্তানি আয় পৌঁছেছে ৪৭৭ কোটি ডলারে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যেও এই সূচক উল্লম্ফনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ উৎপাদন এবং সেবাখাতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। তবে কৃষি খাত কিছুটা ধীর গতিতে এগিয়েছে, আর নির্মাণ খাত- যা আগের মাসে সংকোচনের মধ্যে ছিল, তা আবার সম্প্রসারণে ফিরেছে—যা অর্থনীতির ভারসাম্যপূর্ণ পুনরুদ্ধারকে নির্দেশ করে।
ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে পিএমআই সূচক প্রকাশ করে। কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও পরিষেবা—এই চার খাতের প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই সূচক প্রকাশ করা হয় ।
নির্ধারিত অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যখন বাংলাদেশ মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট এবং বৈদেশিক ঋণের চাপ মোকাবেলা করছে, তখন জুলাই মাসে পিএমআই ৬১ দশমিক ৫-এ পৌঁছানো নিঃসন্দেহে একটি উজ্জ্বল বার্তা। এই পরিসংখ্যান শিল্প, সেবা ও নির্মাণ খাতে জাগ্রত আশাবাদেরও বার্তা, যা দেশের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়।
"জুলাইয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে, যা মূলত সেবা ও উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করেই হয়েছে -যেখানে রপ্তানি আয় পৌঁছেছে সর্বোচ্চ মাসিক মাইলফলক ৪৭৭ কোটি ডলারে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও এম মাসরুর রিয়াজ বিষয়টির ইঙ্গিত দেন । তিনি বলেন,জুলাইয়ে কৃষির গতি কিছুটা কমেছে যা গ্রামীণ শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি আরো বলেন, এখাতের নতুন ব্যবসা, উৎপাদন কার্যক্রম এবং ইনপুট ব্যয়ের সূচকগুলোতে ধীরগতির সম্প্রসারণ দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক বর্ষাকালীন মন্দাভাবের পরিচায়ক।
বাংলাদেশের উৎপাদন খাত গত ১১ মাসের মতো সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে, এবং তা হয়েছে আগের মাসের তুলনায় দ্রুত গতিতে। নতুন অর্ডার, কারখানা উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয়, প্রস্তুত পণ্য, আমদানি, ইনপুট মূল্য, সরবরাহকারীদের ডেলিভারি, এবং পূর্বের অর্ডার ব্যাকলগের সূচকগুলোতে বিস্তৃত ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
তবে বিপরীতভাবে নতুন রপ্তানি এবং কর্মসংস্থান সূচক দুটোতেই সংকোচন দেখা গেছে, যা দেশের শ্রমবাজার এবং বৈদেশিক চাহিদার কিছুটা দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
অন্যদিকে, নির্মাণ খাত জুন মাসে প্রথমবারের মতো সংকোচনের মুখে পড়ার পর, জুলাইয়ে ফের সম্প্রসারণে ফিরে এসেছে। নতুন কাজ, নির্মাণ কার্যক্রম, ইনপুট খরচ এবং ব্যাকলগ সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেলেও, কর্মসংস্থানে এটি টানা তৃতীয় মাসে সংকোচন রেকর্ড করেছে।



